মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

০৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১৭:০৯

যে আসনে ১৭বছরে জয় পায়নি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

মৌলভীবাজার-২

মৌলভীবাজার-২ আসনে গত ১৭ বছরে জয় পায়নি দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বরং এই আসনে একবার ধানের শীষ ৫ হাজার ভোট পেয়ে এবং নৌকা ২ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছে।

সারা বাংলাদেশেই আলোচিত এই আসনটি। এখানে কেন্দ্রের মনোনীত প্রার্থীকে তৃণমূল গ্রহণ করে না যদি না তাদের পছন্দ হয়। স্রোতের বিপক্ষে গিয়েও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন তারা, এমনকি নিজ নিজ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও। দলীয় প্রতীক থেকে এখানে প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ প্রাধান্য পায়।

১৭ বছরে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বড় দলগুলোর কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থীকে জামানত হারাতে হয়েছে দুইবার। গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কেউই জয়ী হতে পারেননি। এখানে একই প্রার্থীর জয়ের পরের বছরই ভোটারদের একেবারে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় জামানত হারানোর রেকর্ডও আছে।

১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকার গঠন করে তখন সারা দেশে স্রোত ছিল ধানের শীষে কিন্তু এই আসনে প্রায় ৫ হাজারের কম ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী। ২০০৮ সালে সারা দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে জয় পায় আওয়ামী লীগ কিন্তু মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ২ হাজার ভোট পেয়ে হারিয়েছিলেন জামানত। অথচ মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার ভোটব্যাংক খ্যাত চা-শ্রমিক এবং সংখ্যালঘুদের ভোট রয়েছে।

সর্বশেষ বড়দলের মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরে দীর্ঘ সময় কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকা-ধানের শীষের জয়ের দেখা মেলেনি।

২০০১ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ না পেয়ে দলের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন এম এম শাহীন। ১৯৯১ সালে যে বিএনপি জামানত হারায় ২০০১ এর নির্বাচনে সে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সুলতান মনসুরকে হারিয়ে ফুটবল প্রতীক নিয়ে জয়ী হন।

২০০৮ এর নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন সুলতান মনসুর। সে নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হন জাতীয় পার্টির নবাব আলী আব্বাস। এই নির্বাচনে জয় পায় জাতীয় পার্টি অথচ ১৯৯৬ এর জয়ী নৌকা এ নির্বাচনে পায় ২ হাজার ভোট। অবশ্য সে নির্বাচনে তৃণমূলের জনপ্রিয় প্রার্থী সুলতান মনসুর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামেন।

২০১৪ তে বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করলে এই আসনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পায় জাতীয় পার্টি। কিন্তু মহাজোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের আব্দুল মতিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন।

২০০৮ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে যে লাঙ্গল জয় লাভ করে সেই লাঙ্গল ২০১৪ তে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যায়।

শুধু তাই নয় এই আসনে ১৯৮৬ সালে মুসলিম লীগের ইউসুফ জিতেছিলেন বিপুল ভোটে কিন্তু এর পরের নির্বাচনে সে একই প্রার্থী পান ১ হাজারের কম ভোট। ১৯৯১ সালে যে বিএনপি ৫ হাজারের কম ভোট পেয়ে জামানত হারায় ২০০১ এ বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হন এম এম শাহীন। ১৯৯৬ সালে নৌকা জয়ী হয়, ২০০১ সালে হয় দ্বিতীয়। কিন্তু ২০০৮ সালের এসে নৌকার প্রার্থী জামানত হারান ২ হাজার ভোট পেয়ে।

২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি ১ লাখ ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয় কিন্তু ২০১৪ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মহাজোটের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেও হেরে যান আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মতিনের কাছে।

এবার ঘটেছে আরও নাটকীয় ঘটনা, আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্য দিকে বিএনপির এম এম শাহীন বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

ফলে এই বছর আওয়ামী লীগ-বিএনপির জোটের প্রার্থী থাকলেও নেই দলীয় প্রার্থী। তবে একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এখানে না থাকলেও মূল লড়াই হবে সুলতানের ধানের শীষ এবং শাহীনের নৌকার মধ্যে। ফলে বড় দুই দল না থাকলেও ২২ বছর পর তাদের কোন একটি প্রতীকের জয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এই আসনে বড় কোন দল থেকে জয়ী সর্বশেষ প্রার্থী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত