জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

০৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:১৬

গোলাপগঞ্জে শিমের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে হতাশ কৃষকরা

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় এবার শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর শিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষকরা। গত বছর এ সময় প্রতি কেজি শিমের দাম ছিল ২০ থেকে ৩০টাকা। কিন্তু এবছর প্রতি কেজি শিমের দাম ৮ থেকে ৯টাকায় নেমে এসেছে।

উপজেলার সবচেয়ে বেশি শিম চাষ হয়েছে লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে। জানা যায়, লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের উত্তরগাঁও, পশ্চিম পাড়া, ভুটিরা পাড়া, ইসলামাবাদ, নিলামপাড়া, নোয়াই, মোলাটিকর, মাদারখা, বিদাই টিকর, চক্রবর্তী পাড়া, মাইজপাড়া, পুরকায়স্থ পাড়া, তাহিরপাড়া, নিশ্চিন্ত, মুকিতলা, ফুলতলা, দক্ষিণভাগ, করগাও, ফুলসাইন্দ প্রভৃতি এলাকায় শিমের ভাল ফলন হয়। এছাড়াও লক্ষিপাশা ইউনিয়িনের কোনাচর, শ্রীবহর, ঘাসিবর্ণী, জগঝাপ, জাঙ্গালহাটা, পালপাড়া, নিমাধল, কতোয়ালপুর, বাউশী, দক্ষিনভাগ, ঘোষগাঁও এলাকায়ও শিমের চাষ করা হয়।

সরেজমিন লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কৃষকরা বিক্রয় উপযোগী হয়ে ওঠা শিম সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাজারজাত করতে মাচা থেকে তারা আহরণ করছেন শিম। কৃষকরা আহরণের পর ঠেলা গাড়ি ভর্তি করে শিম নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় চৌধুরীবাজার, পুরকায়স্থ বাজারে। এ দুটি বাজারে স্তূপাকারে রাখা শিম পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে ধর কষাকষি করে বিক্রি করছেন তারা। পাইকাররা তা কিনে বস্তাভর্তি করে ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছেন শহরের বিভিন্ন বাজারে। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে এভাবেই জমে ওঠে শিমের বাজার।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এবার শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিক ফলনের পরও হতাশ তারা। গত বছর এই সময়ের তুলনায় এবার শিমের দাম অনেক কম। এতে উৎপাদন খরচ উঠলেও তেমন লাভ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

স্থানীয় করগাঁও গ্রামের শিম চাষি আব্দুল হামিদ জানান, এ বছর শিম উৎপাদন বেশি হলেও দাম অনেক কম। পাইকাররা প্রতি কেজি শিম ৮/৯ টাকা করে কিনলেও শহরে, নগরে-বন্দরে শিমের কেজি ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। করগাঁও গ্রামের ইমরান আহমদ জানান, তিনি এ বছর চার বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। কিন্তু এবার দাম কম থাকায় অনেকটা বিচলিত তিনি।

সালমান আহমদ নামের আরেক শিম চাষি জানান, স্থানীয় পাইকাররা সেন্ডিকেট তৈরী করে শিমের দাম কমেয়ে দেয়। তারা বাহির থেকে আসা পাইকারদের শিম কিনতে বাধা দেয়। এতে করে কৃষকরাই দাম কম পায়। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের মনিটরিং রাখা উচিত বলেও জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলায় ৮৮০ হেক্টর জমিতে শিম উৎপাদন হলেও এ বছর ৯১০হেক্টর জমিতে শিম উৎপাদন হয়েছে। আবাদি জমির পাশাপাশি অনেক অনাবাদি জমিতেও শিম লাগিয়েছেন কৃষকেরা। আর এর বেশির ভাগই উৎপাদন হয়েছে লক্ষণাবন্দ ও লক্ষিপাশা ইউনিয়নে।

উপজেলা কৃষি অফিসার খায়রুল আমিন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা শিম চাষ করায় এ বছর উপজেলায় শিমের অধিক ফলন হয়েছে। আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে।

দাম কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর শিম উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কম। আমরা কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের আর্থিক সহযোগীতায় লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের পুরকায়স্থ বাজারে প্রায় ২০লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি আধুনিক মার্কেট তৈরী করে দিচ্ছি। কাজ শুরু হয়েছে কিছু দিনের মধ্যে এ মার্কেটটি চালু করা হবে। এখানে কৃষকরা শিমের সংরক্ষণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। এছাড়াও এখান থেকে নায্যমূল্যে শিম দেশ বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত