বিন্দু তালুকদার, সুনামগঞ্জ

০৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ২১:১৬

শাল্লায় ‘উৎকোচ না দেওয়ায়’ বেতন বন্ধ ৮ শিক্ষকের

সরকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে কর্মস্থলে যোগদানের পর নিয়মিত পাঠদান করালেও বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লার ৮ জন সহকারি শিক্ষকের। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন ওই ৮ জন শিক্ষক।

অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ে যোগদানের পর প্রায় ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও শাল্লা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফেরদৌসের চাহিদামত (প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা) উৎকোচ (ঘুষ) দিতে না পারায় বেতন হচ্ছে না ওই আট শিক্ষকের। এ অবস্থায় ওই শিক্ষকেরা তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সহকারি শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে শাল্লা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফেরদৌসের সাথে কথা বলতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করলেও মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেননি তিনি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ২৫/০৯/২০১৮ ইং তারিখের (স্মারক নং- ৩৮.৪৬.৯০০০.০০০. ১৭.০০৮.১৮ -১৫৬৮(১৭) মোতাবেক গত বছরের ১০ অক্টোবর সহকারি শিক্ষিকা মিতু রানী দাস কাশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সমাপ্তি রানী দাস-বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ঝুমকা আক্তার-আব্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাহানারা আক্তার-নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রিপনা রানী সরকার-কাশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নীলেন্দু দাস-ভেড়াডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহিনা আক্তার-শাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুশরা আক্তার-ডুমরা রসিকলাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।

যোগদানের পর ওই শিক্ষকগণ নিয়মিত বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন। যোগদানের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন না তাঁরা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফেরদৌস শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ছাড় দিচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নব-নিযুক্ত ৫ জন শিক্ষক বলেন, "আমাদের যোগদানের ৩ মাস পেরিয়ে গেছে তবুও বেতন পাচ্ছি না। বেতনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফেরদৌস স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উনি বেতন ছাড়ের জন্য প্রত্যেকের কাছে ১০ হাজার টাকা করে দাবি করছেন। আমাদের নতুন চাকুরী, টাকা দেব কোথা থেকে? শিক্ষা অফিসারের চাহিদা মতো উৎকোচও দিতে পারছি না, বেতনও পাচ্ছি না। টাকা না দেওয়ায় আমাদের বেতনও ছাড় দিচ্ছেন না।"

বেতনভাতা ছাড়ে সহকারি শিক্ষকদের কাছে ১০ হাজার টাকা করে উৎকোচ চাওয়ার বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, "উপজেলা শিক্ষা অফিসার বেতন ছাড়ে প্রত্যেক সহকারি শিক্ষকের কাছে নগদ টাকা দাবি করেছেন। শিক্ষকরা সেই টাকা দেননি। তাই তাদের বেতনভাতাও ছাড় হচ্ছে না। বিষয়টি অমানবিক ও লজ্জার, কারণ হয়রানির ভয়ে এসব বিষয় নিয়ে কেউ জোরালোভাবে প্রতিবাদ করতে পারেন না।"

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা বলেন, "শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত