নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০১:২৬

সময় পেরোলেও এখনও শুরু হয়নি হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ

বেশিরভাগ উপজেলায় এখনও পিইসি গঠন হয়নি, শঙ্কায় কৃষক

১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা। আর বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিইসি) গঠন করার কথা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। তবে সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ উপজেলায়ই এখনই গঠন করা হয়নি পিইসি। ফলে এখনো শুরু হয়নি বাঁধ নির্মাণ কাজ।

এতে সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় হাওরপাড়ের কৃষকরা। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে বাঁধ নির্মাণ শেষ না হলে অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। ২০১৭ ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষকদের।

২০১৭ সালে সঠিক সময়ে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় অকাল বন্যায় তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ বোরো ফসল। সরকারী হিসেবে, ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪ হাওড়ের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল। তবে কৃষকদের হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিলো প্রায় দ্বিগুণ।

গত বছরও হাওড়গুলোর পানি নিষ্কাসনে বিলম্ব হওয়ায় বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু হয়নি। তবে এবার সময়মত হাওড়ের পানি কমলেও এখনও শুরু হয়নি বাঁধের কাজ। যদিও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বলছেন, সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এবার সঠিক সময়ে পিইসি গঠন করা যায়নি। তবে ইতোমধ্যে পিইসি গঠন কাজ শুরু হয়েছে। এসব কমিটি গঠনের পর দ্রুতই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ৩৭টি হাওড়ের বোরো ফসল রক্ষায় কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও ভাঙ্গা মেরামত করতে প্রাথমিকভাবে ৫৫৩টি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর জন্য ৯৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে। পাউবো থেকে ইতোমধ্যে ১৮ কোটি টাকা পিইসি’র আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ একাউন্টের অনুকূলে ছাড় দেওয়া হয়েছে। পদাধিকার বলে সব পিইসির আহ্বায়ক হন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করা হয়।

বাঁধ নির্মাণ কাজ এখনও শুরু না হলেও বসে নেই হাওরপাড়ের কৃষকরা। নভেম্বর থেকে বোরো চাষ শুরু করে দিয়েছেন তারা। হাওড়ে হাওড়ে এখন গজিয়ে ওঠছে ধানের নতুন চারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় বোরো ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর। জেলার ১৫৪টি হাওড়ে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। গতবছর ২ লখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছিলো বলে জানান কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমি চাষাবাদের আশা তাদের।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর ছিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, জেলার জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলায় পিইসি গঠন করা হয়েছে। তারা দ্রুতই বাঁধের কাজ শুরু করবে। বাকী উপজেলাগুলোতে পিইসি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দু’একদিনের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে।

নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে পিইসি গঠনে দেরী হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পিইসি গঠন ও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুতে দেরী হলেও সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

দেখার হাওড়ের কৃষক লতিফ মিয়া বলেন, সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। এবার ২০১৭ সালের মতো যদি বন্যা হয় তাহলে আমাদের আর বাঁচার উপায় থাকবে না।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মজলুল মজিদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নানা অজুহাত দেখিতে প্রতিবছরই বাধ নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরী করা হয়। পরে তাড়াহুড়া করে দুর্বল বাঁধ তৈরি করা হয়। যা অল্প বৃষ্টি আর পানির তোড়েই ভেসে যায়।

পাউবো কর্মকর্তাদের নির্বাচনী ব্যস্ততার অজুহাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের কারণে বৃষ্টি বা অকাল বন্যা দেরীতে আসবে না। ফসল তলিয়ে গেলে কোনো অজুহাত দেখিতেই তো আর কাজ হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বশির আহমদ সরকার বলেন, ইতোমধ্যে ৩০ ভাগ ধান রোপণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। সব হাওড়ে এখন পুরোদমে বোরো চাষাবাদ চলছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষাবাদ হবে বলে আশা করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত