ছাতক প্রতিনিধি

১৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:১২

ছাতকে সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ আহত ২০

সুনামগঞ্জের ছাতকে তুচ্ছ এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্র,শিক্ষক, নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৫ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের ছাতক ও কৈতক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ও বিকেলে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের হাসনাবাদ বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল হাদীস হাসনাবাদ মাদরাসায় শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে সহকারি শিক্ষক মাওলানা শরফ উদ্দিন ও প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম মাওলানা কমর উদ্দিনের মধ্যে কথা কাটা কাটি হয়। মাওলানা শরফ উদ্দিনের দাবি মুহতামিম কর্তৃক সকল শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করলেও রহস্যজনক কারণে তার বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। এ বিষয় নিয়ে রোববার দুপুরে মাদরাসা শিক্ষক মিলনায়তনে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।

এর জবাবে প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম নিয়মনীতি অনুসারে অশালীন আচরণের জন্য মাওলানা শরফ উদ্দিনকে মাদরাসা থেকে বহিষ্কারের উদ্যোগ নেন। কিন্তু এর আগে ছেলে কর্তৃক এমন অশালীন আচরণের বিষয়টি তার পিতা মাওলানা আজাদ মিয়ার কাছে মোবাইল ফোনে অবহিত করেন মুহতামিম মাওলানা কমর উদ্দিন। এ নিয়ে মুহতামিমের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সহকারি শিক্ষক মাওলানা শরফ উদ্দিন।

সোমবার মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে যোহরের নামাজরত অবস্থায় মুহতামিমের উপর হামলা চালায় সহকারি শিক্ষক শরফ উদ্দিন। তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপস্থিত লোকজন ধামাচাপা দিলেও আছরের নামাযের পর সহকারি শিক্ষক কর্তৃক মুহতামিমের উপর হামলার ঘটনার খবর পেয়ে মাদরাসার কয়েকজন ছাত্ররা সংঘবদ্ধ হয়ে মুহতামিমের পক্ষে প্রতিবাদ গড়ে তুলে। মুহূর্তের মধ্যে সহকারি শিক্ষকের পক্ষে আরেকটি সংঘবদ্ধ দল তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা চালালে দু’পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের লোকজন দেশিও অস্ত্র, ইট-পাটকেল ব্যবহার করে। প্রায় ঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষে নারীসহ উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়।

খবর পেয়ে ছাতক থানার ওসি (অপারেশন) গোলাম মোস্তফা, এসআই আমীর খছরুর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে ছাতক-সিলেট সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন, মাওলানা তাজুল ইসলাম (৪৫), মাওলানা শরফ উদ্দিন (২৮), রাজ উদ্দিন (২২), ইসলাম উদ্দিন (৩২), নিজাম উদ্দিন (২৯) কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এছাড়া জামিল আহমদ (১৮), আবুল কালাম (২১), মকবুল হোসেন (২০), শাহিন আহমদ (২২), আলকাব আলী (৯৫), ছাদক আলী (৬৫), পপি বেগম (২৫), সজনা বেগম (৪০), রত্মা বেগম (১৪), মাওলানা কমর উদ্দিন (৫৫)সহ অন্যান্য আহতদের ছাতক ও কৈতক হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়।

এদিকে নামাজ চলাকালীন মুহতামিমের উপর হামলার ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে মাওলানা শরফ উদ্দিন বলেন, পূর্ব আক্রোশে মুহতামিম মাওলানা কমর উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মাওলানা আবদুল কাদিরসহ অন্যান্য সহযোগিতা বিভিন্ন ভাবে তাকে হয়রানী করে আসছে। সকল শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি করলেও রহস্যজনক কারণে তার বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। শিক্ষকদের বৈঠক চলাকালে শান্তিপূর্ণ ভাবে এর প্রতিবাদ করলে শিক্ষক-ছাত্রদের উস্কানি দিয়ে তার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে আহত করা হয়। এ হামলা করেও ওরা ক্ষান্ত হয়নি। হামলাকারীরা তার বসতবাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট তাণ্ডব চালায়। এসময় প্রতিবাদ করলেও হামলা থেকে রেহাই পায়নি বসতঘরে থাকা শিশুসহ কয়েকজন মহিলা।

এ ব্যাপারে মুহতামিম মাওলানা কমর উদ্দিন বলেন, রেজুলেশন মোতাবেক মাওলানা শরফ উদ্দিনসহ সকল শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হলে শরফ উদ্দিন মনক্ষুন্ন হয়ে বাকবিতণ্ডা ও অশালীন আচরণ করেন। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও নোটিশ বোর্ডে লাগানো হয়নি। বিষয়টি তার পিতাকেও অবহিত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সোমবার যোহরের নামাজরত অবস্থায় মসজিদের ভেতরে তার উপর অতর্কিত ভাবে হামলা চালায় শরফ উদ্দিন। বিকেলে ছাত্ররা এ হামলার ঘটনা জানতে গেলে তাদের উপর প্রতিপক্ষরা আক্রমণ চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করা হয়।

তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় সম্প্রতি তার পিতা মাওলানা আজাদ মিয়াকে মাদরাসা কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। হামলা ও লুটপাটের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত