শাবি প্রতিনিধি

১৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ২১:৩১

‘শিক্ষকদের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছিল প্রতীক’

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনায় বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলছে নিহতের পরিবার।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাতে সিলেট শহরের বাগবাড়ী এলাকার একটি মেস থেকে স্নাতক ২০১১-১২ সেশনের এ শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আত্মহত্যার ঘটনায় প্রথম থেকেই বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাস্টার্সে নম্বর কম দেওয়া এবং থিসিসের জন্য সুপারভাইজার না দেয়াকে দায়ী করেছেন প্রতীকের বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তৌহিদা।

সোমবার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, "মাননীয় ভিসি ফরিদ স্যারকেও আমরা পরিবার থেকে জানিয়েছি..ফরিদ স্যার কে আমি এও জানিয়েছি আমরা আমার ভাইকে নিয়ে টেনশনে আছি। চারিদিকে ছাত্ররা সুইসাইড করছে আমরা তাই ভয়ে থাকি ওকে নিয়ে.. ফরিদ স্যার নিজে আমাদের পরিবারকে ওর পাশে থাকতে বলেছিলেন। ফরিদ স্যার নিজে প্রতীকের শিক্ষক প্রফেসর আজাদ কে অনুরোধ করেছিলেন সুপারভাইজার দিতে!  তাও তাকে সুপারভাইজার দেয়নি বিভাগ!"

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, "অনেক দিন আগের কথা, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই তার ফ্যামিলি থেকে সুপারভাইজার না পাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। আমি তখন তার ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি অবগত করি।"

তিনি আরো বলেন, "তবে পরে আর আমার সাথে প্রতীকের পরিবারের কেউ যোগাযোগ করে নি কিংবা পরবর্তীতে তার ফলাফল কি হয়েছিল এই ব্যাপারেও আমাকে কেউ অবগত করেনি।"

এদিকে আত্মহত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন প্রতীকের বাবা মো. তৌহিদুজ্জামান। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিয়া বলেন, "আমরা তদন্তের মাধ্যমে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।"

তাইফুর রহমান প্রতীকের ভগ্নীপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রিজভী শাহরিয়ার বলেন, "মাস্টার্স শেষে কোন শিক্ষক তার সুপারভাইজার হিসেবে দেওয়া হয় নাই। শিক্ষকরা ঠিক করেছে কেউ তাকে সুপারভাইজ করবে না। প্রত্যেক শিক্ষকদের পায়ে ধরে ধরে ক্ষমা চেয়েছে; স্ট্রেচারে ভর দিয়ে ল্যাংড়ায়া ল্যাংড়ায়া। কিন্তু তাকে সুপারভাইজার দিবে না তা ডিপার্টমেন্ট কম্বাইন্ডলি ডিসিশন নিয়েছিল।"

প্রতীক অনার্সে ৩.৮২ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তবে মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারে তার সিজিপিএ কমে হয় ৩.৫৮। আর দ্বিতীয় সেমিস্টারে তার রেজাল্টে ধস নেমে সিজিপিএ হয় ৩.০৮। মাস্টার্সের দুই সেমিস্টার মিলে র‍্যাংকিয়ে তার অবস্থান হয় সপ্তম।

রোববার এক ফেইবুক স্ট্যাটাসে মৃতের বড় বোন শান্তা লেখেন, "অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানায়ে মাস্টার্স এ সুপারভাইজার দেয় নাই। বিভিন্ন  কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে। আমার ভাইটি টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এটাই তার অপরাধ...। গত ছয়মাস ধরে ডিপার্টমেন্ট তিলে তিলে মেরে ফেলেছে আমার ভাইকে।"

তাকে সুপাইভাইজর কেন দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে জিইবি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামসুল হক প্রধান বলেন, "সুপারভাইজার না দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। আমি কিছুদিন হল বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে এসেছি। এটি তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।"

সোমবার (১৪ জানুয়ারি) ফেইসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার জন্য শিক্ষকদের দায়ী করে ভাই হত্যার বিচার চেয়েছেন শান্তা।

আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার এন্ড মিনারেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর মো. সামিউল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, "গত দুই-একদিন আগে সে বাইরে যাওয়ার জন্য বিভাগ থেকে রিকোমেন্ডেশন নিয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সে আত্মহত্যা করল। আমার মনে হয় ঘটনাটি আরও তদন্ত করে দেখার বিষয়।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত