শাহ শরীফ উদ্দিন

২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০১:১৬

একই কায়দায় একের পর এক ছিনতাই, আতঙ্কে নগরবাসী

গত ২ জানুয়ারি সকাল ১০ টার দিকে নগরীর জালালাবাদ এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক শফিউল আলম নাদেলের মেয়ে মাইশা চৌধুরী (১৭)। সেদিন মাইশার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসায় ছিনতাইকারীরা মাইশার কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিতে না পারলেও তার হাতে ছুরিকাঘাত করে তারা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনাসহ নগরীতে চলতি মাসে ১০টিরও অধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ ছিনতাই ঘটেছে ভোর বেলা। আচমকা নগরীতে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে।

তবে পুলিশ বলছে, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া অধিকাংশই নারী এবং শিশু ঝামেলা এড়াতে থানায় অভিযোগ করেন না। ফলে ছিনতাইয়ের ঘটনার অধিকাংশেরই তথ্য নেই পুলিশ প্রশাসনে।

যদিও একাধিক ভুক্তভোগীর দাবি, ছিনতাইয়ের পর মামলা করতে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে চায় না। অনেকক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের ঘটনাকে চুরি আখ্যা দিয়ে সাধারণ ডায়রি নেয় পুলিশ।

সর্বশেষ গত রোববার (২০ জানুয়ারি) সকালে বাসা থেকে ব্যাংকে আসার পথে তালতলা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট শাখার যুগ্ম পরিচালক লিলি রানী দেবী।

লিলি রানী দেবী জানান, ওইদিন সকালে বাসা থেকে তিনি রিকশাযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছিলেন। তালতলা পয়েন্টে হোটেল সুফিয়ার সামনে আসামাত্র মোটরসাইকেলযোগে দু'জন ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। ছিনতাইকারীরা অস্ত্র দেখিয়ে তার ৩৭ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এব্যাপারে কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন বলেও জানান লিলি।

একই কায়দায় টিলাগড় মাদানি ঈদগাহর কাছে ছিনতাইয়ের শিকার হন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। এসময় তাদের কাছ থেকে হাতব্যাগ, মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা, মীরের ময়দান এলাকায় ভোরবেলা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন স্কুল শিক্ষার্থীর এক নারী অভিভাবক।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা লিলি রানী দেবী ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। সরকার দলীয় এক নেতাও সম্প্রতি এসব অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্প্রতি নগরীতে ঘটে যাওয়া সব কটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে একই কায়দায়। সবগুলো ছিনতাই এর ঘটনাতেই ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেলযোগে মাথায় হেলমেট পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করেছে বলে জানিয়েছেন ছিনতাইয়ের শিকার একাধিক ব্যক্তি। আর এসব ছিনতাই হয় রাতে, না হয় ভোর বেলা ঘটেছে।

ছিনতাইকারীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে রিকশায় চড়া একা নারী ও শিশু। বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নগরীর তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, জালালাবাদ, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মেডিকেল সড়ক, হাওয়াপাড়া এলাকায়। তবে সম্প্রতি পুরো নগরজুড়েই চলছে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ছিনতাইকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই বেড়েই চলছে। তবে পুলিশ বলছে, তাঁরা হার্ডলাইনে আছে।

ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা।

তিনি বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে মেট্রোপলিটন পুলিশ হার্ডলাইনে আছে। তবে যেসব ছিনতাইকারীরা অতিতে গ্রেপ্তার হয়েছে তাঁরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ছিনতাই শুরু করায় এবং বড় ছিনতাইকারীদের মাধ্যমে ছোট ছোট ছিনতাইকারী তৈরি হওয়ায় হয়তো ইদানীং ছিনতাই বেড়েছে। তবে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ সব সময় কাজ করছে।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ আসে না তাই এসব ঘটনা পুলিশের অজানাই থেকে যায়। তবে পত্রিকা মাধ্যমে বা যে মাধ্যমেই হোক পুলিশ খোঁজ পেলে তাৎক্ষণিক ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় । সেখান থেকে ছিনতাইয়ের আলামত সংগ্রহ করার চেষ্টা করে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।

জেদান আল মুসা আরও বলেন, আপনারা দেখতে পারছেন আমরা ছিনতাই রোধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত