সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১৭:৪১

বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হলে ঘাড় ধরে পানিতে চুবানো হবে : প্রতিমন্ত্রী জাহিদ

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, "যারা বাঁধ নির্মাণ কাজের অনিয়ম করবে তাদের কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী হাওরের বিষয়ে আন্তরিক। তিনি সব সময় হাওরের মানুষের খোঁজ খবর রাখেন। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের পছন্দ করেন না।"

শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় এক প্রকল্প চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "প্রকল্প কাজ ভালভাবে না করলে এক টাকাও বিল পাবেন না। বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম হলে আপনাদের ঘাড় ধরে পানিতে চুবানো হবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমি সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছি। সেখানে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলাম। চাকরিরত অবস্থায় অন্যায়ভাবে একটি টাকাও খাইনি, এখনো খাব না।"

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ বলেন, "হাওরের ফসল আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে বন্যায় হাওরের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ২০১৮ সালে বন্যা হয়নি বলে হাওরের ফসল রক্ষা পেয়েছে। এ বছর সরকার আগে থেকেই চেষ্টা করছে ফসল রক্ষা বাঁধ যেন সঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়। বর্ষা আসার আগেই যেন বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। বাঁধ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কমিটি করা হয়েছে। তবে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ আমরা যেভাবে আশা করেছিলাম সেভাবে হচ্ছে না।"

প্রতিমন্ত্রী বলেন, "যেভাবে কাজ হচ্ছে এ কাজের ওপর ভিত্তি করে আমরা কোনও পিআইসি-কে (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) টাকা দেবো না। কাজের লক্ষ্যমাত্রা যে পর্যন্ত পূরণ না হবে সে পর্যন্ত আমরা কোনও টাকা পয়সা দিতে রাজি নই।"

তিনি বলেন, "শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল হলে হবে না। কেউ যদি মনে করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এসে সুইচ টিপে বাঁধ নির্মাণ করে দেবে তা তো হবে না। যাকে বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আজ যে কাজ দেখে আমি বকাবকি করলাম তার তো কোনও দরকার ছিল না। ভালো কাজ করলে সবার প্রশংসা করতাম। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতাম। আমি যা করেছি এই এলাকার জনগণের জন্য করেছি। যাতে এই এলাকার ফসল নষ্ট না হয় সে জন্য করেছি।"

হাওরে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, "হাওরে স্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ একটি বিশাল প্রকল্প। শুধু প্রকল্প নিলেই হবে না, বাস্তবায়নও করতে হবে। এটা সময় লাগবে জেনে আমরা হাওরে প্রতিবছর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করি। আমরাও চাই না এখানে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করি। আমরা চাই স্থায়ীভাবে একটা কিছু হোক। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে সময় লাগবে।  এতে অনেক পরিকল্পনার বিষয় রয়েছে। হাওরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি দেখা যায় যে হাওরে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে ঠিক হবে তাহলে আমরা সে পথেই এগুবো।"

তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, "গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবর দেখে আমি ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে এসেছি। আপনারা দেখেন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোথায় অনিয়ম ও গাফিলতি রয়েছে। সেগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করেন, কাজ হবে। এখানে ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি হলেন আমাদের চালিকাশক্তি। আমরা তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকার খেটে খাওয়া মানুষদের খুব ভালোবাসেন। তার ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটে আমাদের কাজকর্মে। আমাদের কাজ হলো প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা।"

এর আগে উপজেলার মাটিয়ান হাওরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন প্রতিমন্ত্রী। তিনি নির্মাণাধীন বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের আনন্দ নগর, বোয়ালমারা, বনুয়া অংশের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন।

এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মুহাম্মদ ইউসুফ, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম, থানা অফিসার ইনচার্জ নন্দন কান্তি ধর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক হাফিজ উদ্দিন, যুবলীগ সাবেক যুগ্ম আহবায়ক অনুপম রায়, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানসেন তালুকদার তুষার, ছাত্রলীগ নেতা ধীমান চন্দ, সায়েম তালুকদার, মবিন নূর, রোমান আহমেদ তুষা প্রমুখ।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলী মর্তুজা, মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি কর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত