সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১৮:৫০

ধর্মপাশায় সরকারি পাঠ্যবই কেজি দরে বিক্রি

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলকপুর মধ্যবাজার থেকে প্রায় ২০ মণ নতুন ও পুরোনো সরকারি পাঠ্যবই উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। উপজেলার গোলকপুর হাজী আব্দুল হাফেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুল আলমের নির্দেশে ওই প্রতিষ্ঠানটির ধর্মীয় শিক্ষক আহম্মদ হোসেন এই বইগুলো ১০টাকা কেজি দরে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের গোলকপুর হাজী আব্দুল হাফেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির কক্ষে ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির নতুন-পুরোনো উদ্বৃত্ত পাঠ্যবই রাখা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জহিরুল হক (৩৮) নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ১০টাকা কেজি দরে সপ্তম শ্রেণির কক্ষে থাকা বইগুলো বিক্রি করে দেন ওই প্রতিষ্ঠানটির ধর্মীয় শিক্ষক আহম্মদ হোসেন। পরে ব্যবসায়ী জহিরুল শ্রমিক নিয়োজিত করে বস্তার ভেতর বই ভরে এগুলো গোলকপুর বাজারে ব্যবসায়ী জহিরুল হকের ভাড়াটে দোকানের সামনে রাখেন। আর কিছু বই ভ্যানগাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই বাজারে থাকা স্থানীয় লোকজন বিকেল পাঁচটার দিকে এগুলো আটক করে। পরে ব্যবসায়ীর ভাড়াটে ঘরের সামনে রাখা বইগুলোও উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে জানান ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য জাকির হোসেন। ইউএনও এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বইগুলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিজ জিম্মায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।

এব্যাপারে সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ বলেন, আমি ইউএনও স্যারের নির্দেশে উদ্ধার হওয়া নতুন পুরাতন বইগুলো নিজ হেফাজতে নিয়েছি। এই বইগুলো বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তাঁদেরকে খোঁজে বের করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

এব্যাপারে গোলকপুর হাজী আব্দুল হাফেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক আহম্মদ হোসেন বলেন, আমি আশরাফুল আলম স্যারের কথামতো পুরোনো বইগুলো ওই ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছি। তবে দর দাম নির্ধারণ হয়নি। আমি জরুরি কাজে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম এই সময়টাতে হয়তো নতুন কিছু বই পুরোনো বইয়ের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর শ্রমিকেরা নিয়ে নিয়েছে।

এব্যাপারে ব্যবসায়ী জহিরুল হক বলেন, আমি ১০টাকা কেজি দরে বইগুলো কিনেছি। বই ওজন করার পর টাকা দেব এই কথা হওয়ায় আমি এ বাবদ কোনো টাকা দিইনি।

এব্যাপারে গোলকপুর হাজী আব্দুল হাফেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দিনে দুপুরে নতুন পুরাতন বই বিক্রি করার ঘটনাটি আমার এলাকায় অতীতে আর কখনো ঘটেনি। তাই এ ঘটনায় যারাই জড়িত প্রশাসন তাদেরকে খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা উচিত।

এব্যাপারে অধ্যক্ষ আশরাফুল আলম বলেন, আমি বই বিক্রি করার জন্য কাউকে নির্দেশ দিইনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এব্যাপারে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। বইগুলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখার জন্য বলেছি। এ ছাড়া এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত