কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১৭:৪০

কমলগঞ্জে পতনঊষার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জীর্ণদশা

সপ্তাহে একদিন ভিজিটর দিয়ে চলছে ২০ হাজার লোকের চিকিৎসা সেবা, ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার লোকের চিকিৎসা সেবার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটি জীর্ণদশা ধারণ করেছে। নেই চিকিৎসক ও খাবার পানির সুব্যবস্থা। সপ্তাহে একদিন ভিজিটর আসলেও অন্য ছয়দিন রোগীদের কোন চিকিৎসা ও ঔষধ প্রদান করা হয় না। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্থানীয়রা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেও কার্যকর ভাবে কোনো ফলাফল আসছে না। চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।  

সরেজমিনে দেখা যায়, পতনঊষার ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে অবস্থিত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন আয়া অফিস খোলে বসে আছেন। প্রতিদিনই রোগীরা আসলেও চিকিৎসা দেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। প্রায় প্রতিদিনই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে রোগীদের বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হয়। ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার লোকের চিকিৎসা সেবার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটির কক্ষ, টয়লেট ও কোয়ার্টারের শোচনীয় অবস্থা । জীর্ণশীর্ণ ঘরে পোকামাকড়ের বসতি গড়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে টিউবওয়েল না থাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। জাইকার অর্থায়নে এক বছর পূর্বে দুই লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ করানো হলেও তা দৃশ্যমান হচ্ছে না। নামে মাত্র কাজ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাইকা, এলজিএসপি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কয়েকটি গাছ কেটে বিক্রি, প্রবাসী ও স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ইট, রড, সিমেন্ট, অর্থ এবং প্রতিষ্ঠানের গেইট নির্মাণ করা হলেও চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই হাসপাতালে পানির ব্যবস্থাটুকুও নেই। আমার ভাতিঝা রাজন চৌধুরী প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে গেইট নির্মাণ করে দিয়েছে। তাছাড়া গ্রামের লোকজন ইট, রড, সিমেন্ট দিয়ে সহযোগিতা করলেও হাসপতালে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যবস্থা করলেও চিকিৎসা সেবা পচ্ছি না । বর্তমানে কিছু মাটি ভরাট চলছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। কোন ধরণের সেবা পাচ্ছেন না। কারো পানির প্রয়োজন হলে আমার বাড়ি থেকে আনা হয়। কক্ষ ও টয়লেট এর শোচনীয় দশা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন কক্ষেই ফ্যান নেই। তাছাড়া একজন নাইটগার্ড না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির জিনিসপত্রও খোয়া যাচ্ছে।’

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আয়া রেহেনা আক্তার বলেন, ‘সপ্তাহে মঙ্গলবার ভিজিটর আসলে রোগী দেখা হয়। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক সমস্যা রয়েছে। পানির প্রয়োজন হলে পার্শ্ববর্তী বাড়ি থেকে এনে খেতে হয়।’

এ ব্যাপারে পতনঊষার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নারায়ন মল্লিক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চলছে। এলাকার লোকজন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কাজ করানো হচ্ছে। মাটি ভরাট হচ্ছে এবং কোয়ার্টারে কাঠ দিয়ে টিনের চালা তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, টিউবওয়েল চুরি হয়ে যাওয়ায় পানির সমস্যা রয়েছে। তবে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর কমলগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, ‘এক বছর পূর্বে জাইকার মাধ্যমে বরাদ্ধকৃত দুই লক্ষ টাকায় ছাদের সংস্কার কাজ করা হয়।’

কমলগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘এখানে চিকিৎসকের কোন পদ নেই। ভিজিটর রয়েছে। তবে জনবল স্বল্পতার কারণে বর্তমানে অন্যস্থান থেকে সপ্তাহে একদিন একজন ভিজিটর দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানো হচ্ছে। বিষয়টি উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়াও পানীয় জল সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্ধ পাওয়া গেলেই সমস্যার সমাধান হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত