বড়লেখা প্রতিনিধি

২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ২১:১৭

বড়লেখায় চোরদের দেয়া তথ্যে ২টি অটোরিকশা উদ্ধার

মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে আন্তঃজেলা অটোরিকশা (সিএনজি) চোরচক্রের সক্রিয় ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেয়া তথ্য মতে দুইটি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় জানুয়ারির ২৬ তারিখ। সেদিন  রাতে বড়লেখা পৌর শহরের উত্তর চৌমুহনী এলাকায় এক অটোরিকশা চালককে মারধর করে একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পৃথক পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকদিনের পৃথক এ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি চোরেদের দেয়া তথ্যমতে উদ্ধার করা হয়ে ছিনতাইকৃত সেই অটোরিকশাসহ ২টি অটোরিকশা।

অটোরিকশা ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের তারাদরম গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে বাবুল আহমদ (৩৫), পূর্ব চন্ডিনগর গ্রামের মৃত আজই মিয়ার ছেলে আব্দুল হান্নান (৩৪), ছমির উদ্দিন বলাইর ছেলে রাহেল আহমদ (২৫), মোহাম্মদনগর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ আহমদ (২৮), পৌরসভার গাজিটেকা মহল্লার সাখাওয়াত আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (২৫), সিলেট জেলার জালালাবাদ থানার মৃত উস্তার আলীর ছেলে মাছুম আহমদ (৩৫), গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আলামিন (৩০), সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার শিপাউল ইসলাম (৩০)।

এদের মধ্যে ৫ দিনের রিমান্ডে থাকা আলামিন, মাছুম আহমদ, আব্দুল হান্নান গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবং বাবুল আহমদ ও শিপাউল ইসলাম ২০ ফেব্রুয়ারি বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি রাতে বড়লেখা পৌর শহরের উত্তর চৌমুহনী এলাকা থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতা রফিক উদ্দিনের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন যাত্রীবেশে দুজন ছিনতাইকারী। দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের তারাদরম এলাকায় চালককে মারধর করে ছিনতাইকারীরা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। এসময় চালক মুহিবুর রহমান নামে একজন ছিনতাইকারীকে চিনে ফেলেন। গাড়ির মালিকের কাছে তার নাম বলেন তিনি। স্থানীয়ভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়।

এরপর গত ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক নেতা রফিক উদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের তারাদরম গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে বাবুল আহমদ (৩৫), তার ভাই মুহিবুর রহমান (২২), মুড়াউল গ্রামের আব্দুস শুক্কুরের ছেলে সুহেল আহমদ (২২) ও তারাদরম এলাকার বেলাল আহমদের (২৬) নাম এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা রেখে থানায় মামলা করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিন্টু চৌধুরী। তদন্ত কর্মকর্তা অটোরিকশাটি উদ্ধার ও চোরচক্রকে গ্রেপ্তারে নামেন। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে চোরদের অবস্থান শনাক্ত করেন।

পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে প্রথমে সিলেট থেকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় বাবুল আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাবুলের দেওয়া তথ্যমতে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে মাছুম আহমদ ও আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মাছুম ও হান্নানের দেওয়া তথ্যমতে ছাতকের ফেরিঘাট এলাকা থেকে অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়। পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ গ্রেপ্তারকৃত এই তিনজনকে বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমার শুনানি শেষে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামিদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২দিনের রিমান্ডে বাবুল, মাছুম ও হান্নানের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ ১৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে আলামিন (৩০) ও দোয়ারাবাজার এলাকা থেকে শিপাউল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করেন।

পরে এই দুজনের দেওয়া তথ্যমতে দোয়ারাবাজার এলাকা থেকে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। গত ৪ মাস আগে এটি বড়লেখার সদর ইউনিয়নের বিছরাবাজার এলাকা থেকে চুরি হয়েছিল। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত আলামিন ও শিপাউলের ১০ দিনের ও বাবুল, মাছুম ও হান্নানের পুনরায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫ আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে তাদের দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে রাহেল আহমদ (২৫), আব্দুল কুদ্দুস (২৫) ও মো. ইউসুফ আহমদকে (২৮)। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আবেদন করেছেন।

এদের মধ্যে ৫ দিনের রিমান্ডে থাকা আলামিন, মাছুম আহমদ, আব্দুল হান্নান গত ২২ ফেব্রুয়ারি এবং বাবুল আহমদ ও শিপাউল ইসলাম ২০ ফেব্রুয়ারি বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বলেন, ‘অটোরিকশা চুরির মামলায় এসআই মিন্টু চৌধুরী প্রথমে সিলেট, সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার ও চুরি হওয়া সিএনজি উদ্ধার করেন। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার ও একটি সিএনজি উদ্ধার করা হয়। যা ৪ মাস আগে বড়লেখা থেকে চুরি হয়েছিল। সব মিলিয়ে এ মামলায় ৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা একটি বড় চক্র। সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও দোয়ারাজার মিলিয়ে এদের অবস্থান। চোরাই গাড়িগুলো ওখানে নিয়ে তারা বিক্রি ও ব্যবহার করে। তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। চক্রের সবাইকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত