নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মার্চ, ২০১৯ ০০:৫০

সাংসদদের ‘বিরোধিতাও’ ঠেকাতে পারেনি তাঁদের জয়

স্থানীয় সাংসদরা বিরোধিতা করছেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন- এমন অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁরা দু'জন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ছিলেন বিভক্ত। প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে দলের একটি অংশ। এসব সত্ত্বেও অধ্যাপক রফিকুর রহমান আর আবু জাহিদের জয় ঠেকানো যায়নি। প্রতিকুল পরিস্থিতি উৎরিয়ে যথাক্রমে কমলগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা।

গত সোমবার (১৮ মার্চ) অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয় পান রফিকুর রহমান ও আবু জাহিদ। এরমধ্যে রফিকুর টানা তৃতীয়বারের মতো ও জাহিদ টানা দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পরও নিজ এলাকার সাংসদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

সিলেট-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ সুরমা উপজেলা। এই এলাকার সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। মৌলভীবাজার-৪ আসনের আওতাধীন কমলগঞ্জ উপজেলা। এই এলাকার সাংসদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন সময়েই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সাংসদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে নৌকার বিপক্ষে গণসংযোগ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন।

আব্দুস শহীদ নিজের ছোট ভাই, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও সেসময় অভিযোগ করেছিলেন রফিক।

যদিও সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে আব্দুস শহীদ দাবি করেছিলেন, নিজ নির্বাচনী এলাকা শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় কোনও প্রার্থীর পক্ষে তিনি কোথাও প্রচারণায় অংশ নেননি। এমনকি নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানও করেননি। অধ্যাপক রফিকের বিরুদ্ধে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো’র অভিযোগ তুলেছিলেন সাংসদ শহীদ।

তবে ওই উপজেলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেই প্রকাশ্যেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। বিরুদ্ধে কাজ করা আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে সাংসদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

এদিকে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আবু জাহিদ নির্বাচনের আগে দলের নির্বাচনী সেলে অভিযোগ করেন, সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মঈনুল ইসলামের পক্ষে কাজ করছেন।

মাহমুদ উস সামাদও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এই উপজেলায়ও সাংসদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করেন। অনেক নির্বাচনী সভায় বিদ্রোহী প্রার্থী মইনুলকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে পরিচয় প্রদান করেন তাঁরা।

দলের একটি অংশের প্রকাশ্য বিরোধিতা, স্থানীয় সাংসদের সাথে দূরত্ব সত্ত্বেও নির্বাচনে জয়লাভ করেন তাদের দু'জনই।

সোমবার (১৮ মার্চ) সিলেটে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু জাহিদ ১৮ হাজার ৫১৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ময়নুল ইসলাম আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ১৫ হাজার ৭২৫ ভোট ।

আর কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান ৪৯ হাজার ১৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপির ছোট ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইমতিয়াজ আহমেদ (বুলবুল) আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৫০ ভোট।

জয়ের পর বুধবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দলের এমপি আমার সাথে না থাকলেও সাধারণ মানুষ আমার সাথে ছিলেন। তাই শত চেষ্টা করেও নৌকা বিরোধীরা সফল হতে পারেনি।

তিনি বলেন, এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এলাকায় একটি নিজস্ব বলয় তৈরি করে ফেলেছেন। তিনি দলকে ব্যক্তি কেন্দ্রিক করে ফেলেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যার চিত্র এই উপজেলা নির্বাচনেই দেখা গেছে।

আবু জাহিদ বলেন, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীও জনগণের প্রতিনিধি, আমিও জনগণের প্রতিনিধি। নিজ নিজ সীমানায় থেকেই আমরা কাজ করবো। জনগণ উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দিয়েছে। আমি সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করবো।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান বলেন, সাংসদ আব্দুস শহীদ দলের বিরোধিতা করলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা, সাধারণ ভোটাররা আমার সাথে ছিল। তাই বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার জয় হয়েছে।

তিনি বলেন, সাংসদ আব্দুস শহীদের এলাকায় কোনো ভিত্তি নেই। এই উপজেলা নির্বাচনে জনগণ সেটা আবারও বুঝিয়ে দিয়েছে। তিনি কি না করেছেন নৌকার বিজয় ঠেকাতে। তার ভাইকে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। তার জয়ের জন্য জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু তাতে জনগণ কান দেয়নি। এই এলাকার জনগণের নৌকার উপর আস্থা ছিল, আমার উপর আস্থা ছিল, তাই তারা প্রায় ৩০ হাজার ভোট বেশি দিয়ে আমাকে জয়ী করেছেন।

রফিকুর রহমান আরও বলেন, সাংসদ আব্দুস শহীদ নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে শুধু নিজে বিতর্কিত হননি, সংগঠনকেও বিতর্কিত করেছেন। তিনি এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে দিয়েছেন।

নির্বাচন পরবর্তী এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাই আমি জনগণের জন্য এলাকার উন্নয়ন করবো। এতে কেউ বাধা হতে পারবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত