মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

২২ মার্চ, ২০১৯ ১৭:২১

বিশ্বশান্তি কামনায় রবিরশ্মি'র হোলিউৎসব

ছবি: রনজিৎ দত্ত জনি

পাতাঝড়া মৌসুম। শেষ বসন্তে নতুন বছরের আগমনী সুর। শুষ্কতার আড়মোড়া ভেঙে গাছের ডালে ডালে উঁকি দিতে শুরু করেছে কচি পাতারা। বহুমাত্রিক সংস্কৃতির বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মেতে উঠেছেন হোলি উৎসবে। আর এই মাঙ্গলির উৎসব রং ছড়াচ্ছে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের মনে।

পাড়ায় মহল্লায়, কমবেশি সবখানেই যেন হোলির উৎসবময়তা। সনাতন গৃহস্থালি, মন্দির,  সংঘ ছাপিয়ে হোলি উৎসবে মেতে উঠেছে  সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনেক সংগঠন। জল পাহাড়ের জনপদ মৌলভীবাজারেও ছিল হোলির উৎসমুখরতা।

রবিরশ্মি'র হোলিউৎসব

ছবি: রনজিৎ দত্ত জনি

বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটু ভিন্ন ভাবনায় দোল বা হোলি উৎসব পালন করে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র রবিরশ্মি।  বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিবেক জাগ্রত করার আহ্বান ছিল উৎসব উদযাপনে।

শুক্রবার দিনভর  মৌলভীবাজার শহরের উপকণ্ঠে বর্ষিজোড়া এলাকায়  সবুজের বুকে নৃত্যগীত ও রং খেলার আয়োজন ছিল। শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে একে একে গেয়ে উঠেন, বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি/ ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল / হোলি খেলে রাই বিনোদিনী'র মতো গান।

রবিরশ্মি'র হোলিউৎসব

ছবি: রনজিৎ দত্ত জনি

পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য। সবশেষে সবুজের বুকে বাসন্তী সাজে রবিরশ্মি'র সদস্যরা মেতে উঠেন  আবির খেলায়। অনুষ্ঠানে ইতি হয়, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে।

রবিরশ্মি'র সংগঠক আব্দুর রব জানান, প্রকৃতিকে ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা থেকেই বনের ভেতরে এমন আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক ভেসে আসছে রক্তের হোলিখেলার সংবাদ। তাই রবিরশ্মি'র সদস্যরা চায় হোলিউৎসবে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক- এমনটাই জানান আরেক সংগঠক পার্থসারথি কর।

রবিরশ্মি'র হোলিউৎসব

ছবি: রনজিৎ দত্ত জনি

আয়োজক সংগঠনের আরেক সংগঠক রণজিৎ দত্ত জনি জানান,   সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত হয়, বেড়ে উঠে মানবিক মূল্যবোধ। বাংলার বৈচিত্র্যময় এমন উৎসব উদযাপনে  রবিরশ্মি এমন প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন মমিতা সিনহা, অলকা রায়, নন্দিনী সিনহা, সুস্মিতা বীথী, প্রিয়তা চৌধুরী মনি, প্রিয়াঙ্কা। নৃত্য পরিবেশনায় ছিল প্রীতম, কাব্য, রোহিত, অভি।

রবিরশ্মি'র হোলিউৎসব

ছবি: রনজিৎ দত্ত জনি

উল্লেখ্য,  বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সহিত রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রায় বের করা হয়।

এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। সনাতন পঞ্জিকা অনুযায়ী দোল উৎসব বৃহস্পতিবার পালন হলেও এদেশে পুরো পক্ষকালব্যাপী উৎসব পালন করে বাঙ্গালী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত