এস আলম সুমন, কুলাউড়া

২২ মার্চ, ২০১৯ ১৮:৪৭

পাঁচ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রদল নেতা!

কুলাউড়া সরকারী কলেজ

ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দিয়ে কম টাকায় ফরম পূরণ করা যায়। তাই উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীরা এক ছাত্রদল নেতার কাছে টাকা দেন। কিন্তু, ওই নেতা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা দেননি। ফলে ৫ শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ হয়নি। শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রবেশপত্রও আসেনি।

যোগাযোগের চেষ্টা করে নেতার মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছেন এবং বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই ৫ শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সরকারি কলেজে।

কলেজের বিভিন্ন শ্রেণির অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নাম করে কতিপয় নেতারা ভর্তি ও ফরম পূরণে বাণিজ্য চালাচ্ছেন। কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে দেনদরবার করে তাঁরা কম টাকায় এসব কাজ করিয়ে দিতে পারেন। সিলেটের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গত বছরের (২০১৮) ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনলাইনে ফরম পূরণের নির্দেশনা দেয়। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৪৬০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য ২ হাজার ২৩০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কলেজের মাসিক বেতন ২০০ টাকা। ফরম পূরণের সময় বোর্ড নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে বকেয়া বেতন ও ভর্তি ফি (একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি) পরিশোধ করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থীর ফি ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা হয়ে যায়।

এ অবস্থায় কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী জামিল হাসান, দেলোয়ার হোসেন, প্রিয়াংকা চন্দ, সুইটি আক্তার এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মো. আবু বকর জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলের কলেজ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুর রহমানের শরণাপন্ন হন। সাইফুল কম টাকায় তাঁদের এ কাজ করে দেবেন বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুলের দাবি অনুযায়ী, জামিল ৩ হাজার টাকা, দেলোয়ার হোসেন ৬ হাজার টাকা, প্রিয়াংকা চন্দ ৪ হাজার টাকা, সুইটি আক্তার ৪ হাজার টাকা এবং আবু বকর ৪ হাজার টাকা দেন। সাইফুল ফরমে তাঁদের সইও নেন।

গত বুধবার (২০ মার্চ) কলেজে বোর্ড থেকে পাঠানো পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র বিতরণ করা হয়। কিন্তু, পাঁচ পরীক্ষার্থী তা পায়নি। পরে কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁরা জানতে পারেন, ফরম পূরণ না হওয়ায় প্রবেশপত্র আসেনি।

শিক্ষার্থী জামিল হাসান, দেলোয়ার হোসেন ও আবু বকর বলেন, প্রবেশপত্র না পৌঁছানোয় তাঁরা তৎক্ষণাৎ সাইফুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু, তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কুলাউড়া পৌর শহরের লস্করপুর এলাকায় বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেও তাঁকে মেলেনি। এ অবস্থায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের অনেক সহপাঠী ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের আরও কয়েক জন নেতাকে দিয়ে কম টাকায় ফরম পূরণ করিয়েছেন। ওই সহপাঠীদের প্রবেশপত্র এসেছে।

কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দির্ঘদিন ধরে ওই কলেজে একটি সিন্ডকেট চক্র বিভিন্ন ছাত্র রাজনৈতিক দলের প্রভাব দেখি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ, কলেজ ও শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন ফি কম করে দেওয়ার নাম করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। কলেজ প্রশাসনের নাকের ডগায় এই চক্র এমন কাজ করলেও কতৃপক্ষ নিরব থাকেন।

‌তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদল নেতা সাইফুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, চলতি বছরে আমার মাধ্যমে ৮২ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করেছি। এদের মধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় ৪ জনের ফরম পূরণ হয়নি। বিষয়টি আমি ওই শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিলাম।

কুলাউড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সৌম্যপ্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘কলেজে দীর্ঘ দিন ধরেই ছাত্রনেতারা এ কাজ করে আসছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কম টাকা এনে তাতেও নেতারা ভাগ বসায়। শিক্ষার্থীরা সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারত। তাদের অভিভাবকেরা কথা বলতে পারতেন। ফরম পূরণের ব্যাপারে দুই-এক জনের জন্য আমরা বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বোর্ডে সুপারিশ করেছি। বোর্ড কি সিদ্ধান্ত দেয় জানি না। বাকিদের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত