শাকিলা ববি

২৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:৩৬

সাড়ে চার বছর ধরে বন্ধ এমসি কলেজ ক্যান্টিন, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেট মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের ক্যান্টিন। বর্তমানে ক্যান্টিন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ক্যান্টিনের দরজা-জানালাগুলোও কাঠ দিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্যান্টিন না থাকায় প্রতিদিনই দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে। তবে ক্যান্টিন বন্ধের ব্যাপারে কলেজ প্রশাসন ও ছাত্রনেতারা বলছেন ভিন্ন কারণ।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছাত্রনেতারা নেতাকর্মীরা বাকী খেয়ে বিল দেন না তাই কেউ ক্যান্টিন চালাতে রাজী হন না। আর ছাত্রনেতারা নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে ক্যান্টিন পরিচালকের লেনদেনজনিত সমস্যা ও ক্যান্টিনের বর্তমান ভবন ভেঙ্গে এখানে ১০ তলা বিল্ডিং হবে বলে ক্যান্টিন বন্ধ করেছে কলেজ প্রশাসন।

কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের শুরুর সময় পর্যন্ত কলেজ ক্যান্টিনটি চালু ছিল। ছাত্রলীগের নেতারা দীর্ঘদিন বাকী খেয়ে বিল পরিশোধ না করায় ব্যবসা গুটিয়ে নেন ক্যান্টিনের আগের ইজারাদার। এরপর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ক্যান্টিনটি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে ক্যান্টিনের দরজা-জানালা। তাই কাঠ দিয়ে দারজা জানালা স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

কলেজের ডিগ্রী ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী পিংকি দেবনাথ বলেন, ‘কলেজ ক্যান্টিন বন্ধ হয়েছে অনেক দিন আগে। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের। কারণ তাদের র্দীঘ সময় কলেজে থাকতে হয়। তাছাড়া আমাদের ক্যাম্পাস অনেক বড়। কলেজের বাইরে গিয়ে খেয়ে আবার কলেজে এসে ক্লাস করা করা অনেক কষ্টকর।’

অর্নাস ১ম বর্ষের ছাত্রী মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘কলেজে ক্যান্টিন অনেক প্রয়োজন। নতুন ভর্তি হয়েছি তাই কি কারনে ক্যান্টিন বন্ধ জানি না। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়। এত সময় না খেয়ে ক্যাম্পাসে থাকা অনেক কষ্টকর। তাছাড়া দূরত্বের কারণে বাইরে গিয়েও খাওয়ার মুড থাকে না। ক্যাম্পাসে ক্যান্টিন থাকলে অন্তত চা সিঙ্গারাও খাওয়া যেত।

কলেজের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের অফিস সহকারী মামুন আহমদ বলেন, প্রায় ৫ বছর হয়ে যাচ্ছে কলেজ ক্যান্টিন বন্ধ। ছাত্রনেতাদের বাকির কারণে ইজারাদার ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছে। এত বড় কলেজে ক্যান্টিন খুব প্রয়োজন। আমাদের খুব সমস্যা হয় ক্যান্টিন না থাকায়। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে হয়।

বাংলা বিভাগের অর্নাস ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফ আহমেদ বলেন, ‘কলেজে ক্যান্টিন না থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্যারদেরত বাইরে থেকে খাবার এনে দেওয়ার মত লোক আছেন কিন্তু আমাদেরতো নিজেদের গিয়ে খাবার আনতে হয়। এত বড় ক্যাম্পাসে পানি ছাড়া খাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিঘ্রই কলেজ ক্যান্টিনটি চালু করলে আমরা উপকৃত হবো।’

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার নেতা হোসেন আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের নাম নিয়ে বাকি খাওয়া আবার বিল না দেওয়া ব্যাপারটা শুনে খুব হতাশ হয়েছি। ক্যান্টিন থাকা অবস্থায়ত আমরা কলেজে ছিলাম এরকম কোনো অভিযোগ কখনো শুনি নাই। বরং ক্যান্টিন চালু করার জন্য অনেক বার আমরা স্যারদের শরানাপন্ন হয়েছি। স্যাররা বলছেন এখনকার ক্যান্টিন ভবনটি ভেঙ্গে এখানে ১০ তলা বিল্ডিং হবে। সে বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় অত্যাধুনিক ক্যান্টিন হবে। কলেজ কতৃপক্ষের এই আশ্বাসেই আমরা বসে আছি।

তিনি বলেন, ‘কলেজ কতৃপক্ষ ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে ক্যান্টিন পরিচালকের লেনদেনের সমস্যা হয়েছে শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে বেশি কিছু জানি না। ওই সময় কলেজে কথা বলার পরিস্থিতি ছিল না।’

ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বাকী খা্ওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের ছেলেরা কলেজ ক্যাম্পাসে ছিল। ছাত্রলীগ মানে কারা। মুখে ছাত্রলীগ বলেলতো আর ছাত্রলীগ হয় না। কে বা কারা বাকি খেয়েছে এর দায় তো ছাত্রলীগ নেবে না। ছাত্রলীগের কে বাকি খেয়ে টাকা দেয়নি এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কারো নামে কোনো অভিযোগ থাকলে বলা হোক আমরা তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব এবং বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’

হোসেন আহমেদ বলেন, ‘লাল মিয়া চাচা ক্যান্টিনের ইজারাদার) যেদিন চলে যান ওইদিন আমাকে বললেন বাবা আপনিতো কোনো দিন বাকি খান নাই কিন্তু আপনার নাম নিয়ে কয়েকজন খেয়েছে। ৫৫০ টাকা বিল বাকি আছে আপনার নামে। আমি তখনই ৬০০ টাকা দিয়ে চাচাকে বলেছি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিছু মনে রাইখেন না।’

এ ব্যাপারে এমসি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ বলেন, ‘ক্যান্টিন ছাত্রলীগই বন্ধ করেছে। খেয়ে যদি বিল না দেয় তাহলে কে ক্যান্টিন চালাবে। হোস্টেলের ক্যান্টিনও বন্ধ। ছাত্র নেতারা খেয়ে যদি বিল না দেয় তাহলে ক্যান্টিন কিভাবে চলবে। তাই এই কলেজের ক্যান্টিনের দায়িত্ব নিতে কেউ রাজি না।

তিনি বলেন, ‘আগামিকাল একজন আসুক ক্যান্টিন চালানোর জন্য এবং নেতারা বলুক তারা বিল দেবে তাহলে কালকেই ক্যান্টিন চালু করে দিব। হোস্টেলের ক্যান্টিন, কলেজের ক্যান্টিন সব চালু করে দিব। ফ্রি খেলে কলেজে ক্যান্টিন কিভাবে থাকবে।’

সালেহ আহমদ আরো বলেন, ‘ক্যান্টিনের সংস্কার কাজ করতে দুই লাখ টাকা লাগে। আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত আছি। তবে ক্যান্টিন কে চালাবে এবং বিল পাবে কি না আগে সে নিশ্চয়তা দিক ছাত্রলীগ। আমি কালকেই ক্যান্টিন চালু করে দিব। এখানে না হলে অন্য জায়গায় ক্যান্টিন করে দিব। প্রয়োজনে একতলা ঘর বানিয়ে দিব।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত