নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:৪৭

ভোটার তালিকায় ‘গলদ’, বিতর্কে সিলেট চেম্বার

এবার ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্কে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। নির্বাচনকে সামনে রেখে জাল কর সনদে ভোটার হওয়ার বিতর্কে চেম্বার নেতৃবৃন্দ।  

ঢালাওভাবে সদস্য করা নিয়ে ফের নতুন করে আলোচনায় সিলেটে ব্যবসায়ীদের বৃহৎ এই সংগঠন।  

জাল ট্রেড লাইসেন্স ও কর সনদে সদস্যপদ দেওয়ায় অভিযোগে এরইমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে সিলেটে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বানিজ্য মন্ত্রনালয়।

আগামি ২৭ এপ্রিল নির্বাচনকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনের বাছাইয়ে জাল কর সনদে ৮৮ জনের ভোটার হওয়ার তথ্য বেরিয়ে আসে। তাদের মধ্যে ৭ জন আপীল করে সদস্যপদ ফিরে পান ৬ জন। সদস্য তালিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখলে জাল ভোটারের সংখ্যা আরো বেরিয়ে আসনে জানান সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মোহামম্মদ মনির উদ্দিন।  

এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে চেম্বারের বিগত তিনটি অধিবেশনে (১০, ১১ ও ১২ তম সভায়) ১ হাজার ৪০৩ জন সদস্য নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরআগে বোর্ড সভাগুলোতে মাত্র ২০/২৫ জন করে সদস্য নেওয়া হয়। তাও কঠোর যাচাই বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে। একইভাবে ৮ম সভায় ৫৬ জন এবং ৯ম সভায় মাত্র ৮৬ জনকে সদস্যের আবেদন নেওয়া হয়। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য পদে সহস্রাধিক আবেদন নেওয়া হয়েছে, যেগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী নেতা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভোটার বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন চেম্বার নেতৃবৃন্দ। বিগত নির্বাচনগুলোর আগেও এরকম হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন ওই ব্যবসায়ী নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০২১ মেয়াদি কার্য নির্বাহী কমিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ম সভায় সদস্য করা হয়েছে ২৭৬ জনকে, ১১তম সভায় ৪৭৭ জন এবং ১২তম বোর্ড সভায় ৬৫০ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব সদস্যের বিপরীতে কাগজপত্র তেমন যাচাই বাছাই করা হয় না। ফলে ক্রতিপূর্ণ কাগজপত্র দিয়েই চেম্বারের সদস্য করা হয়। একারণে অনিয়মের অভিযোগ এনে এক ব্যবসায়ী নেতা বানিজ্যমন্ত্রনালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। অনিয়মন প্রমাণিত হলে ৩১/৭/২০০২ সালের টিএ রোল অনুযায়ী ৬ বছরের জন্য জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।

এ বিষয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ’র সিনিয়র সহ সভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী বলেন, জাল সার্টিফিকেটে সদস্য হওয়ার বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। যে কারণে কমিশনের যাচাইয়ে জাল ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে এফবিসিসিআই‘র আইনানুযায়ী অনুমোদন দেওয়া ব্যক্তির অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অসুবধা হলে যিনি কাগজপত্র জাল করেছেন তার হওয়ার কথা।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ জাল সনদে ভোটার হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের জাল সনদ সনাক্ত করে। এছাড়া ভোটার বাড়ানোর প্রক্রিয়া প্রতি বছর হয়ে থাকে। এটা ট্রেডিশন। গত ২০ বছর ধরে এমনটি হয়ে আসছে। যদিও আগে মাসে ১৫/২০ জন সদস্য হতেন, সেখানে এখন একশ’ দেড়শ’ হচ্ছেন।

তিনি বলেন, সদস্য আবেদনে সৃজনকৃত জাল কাগজপত্র যাচাই সম্ভব হয় না। প্রথম দিয়ে দিই। এরপর যাচাইয়ে ধরা পড়লে বাতিল করে দেই। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটাই একমাত্র চাওয়া।  সিলেট চেম্বারে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ভোটার রয়েছেন, জানিয়েছেন চেম্বার সভাপতি।

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, আপীলে যাদের কাগজপত্র ঠিক পাওয়া গেছে, কেবল তাদের সদস্য হিসেবে অন্তভূক্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত