নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চ, ২০১৯ ১৬:১৯

ওয়াসিম হত্যা: চালক-সহকারীসহ ৩জনকে আসামি করে মামলা

মামলা করতে পরিবারের অনাগ্রহের কথা আগেই জানা গিয়েছিলো। অবশেষে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষ বাদী হয়েই নিজেদের শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাস হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে।

সোমবার (২৫ মার্চ) সিকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বাদী হয়ে মৌলভীবাজার সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২২)।

মামলায় গাড়ির চালক মো. জুয়েল (২৬), তার সহকারী (হেলপার) মাসুক মিয়া (৩৮) ও ও সুপারভাইজার শেফুল মিয়া (৩৫) কে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুপারভাইজার এখনও পালতক রয়েছে। এজাহারে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে ওয়াসিমকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

এজাহার দায়েরকালে ঘটনার সময় ওয়াসিমের সাথে ওই বাসে থাকা সিকৃবির ১০ শিক্ষার্থীও থানায় উপস্থিত ছিলেন।

মৌলভীবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুহেল আহাম্মদ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে দুই আসামিকে আটক করা হয়েছে। তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাসটিও জব্দ করা হয়েছে। সুপারভাইজারকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সকালে সিকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডু বলেন, আমাদের ছাত্র ওয়াসিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোন দুর্ঘটনা নয়, ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড। ওয়াসিমের পরিবার শোকে মুহ্যমান, তাই তারা হয়তো কোন মামলা করতে যাচ্ছে না। কিন্তু ওয়াসিম হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা হত্যা মামলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী দশ ছাত্রকে নিয়ে আমরা মৌলভীবাজার সদর থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছি। যেহেতু এটা পরিষ্কারভাবে একটি হত্যাকাণ্ড, সেহেতু আমরা হত্যা মামলা দায়ের করবো।

এদিকে ওয়াসিমকে বাসচাপা দিয়ে ‘হত্যার’ প্রতিবাদে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার সিকৃবির শিক্ষার্থীরা ওয়াসিম হত্যার দাবিতে নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেন তারা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তিনদিনের কর্মসূচিতে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত চালক ও হেলপারের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা, উদার পরিবহনের রোড পারমিট ও লাইসেন্স বাতিল করা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলতে না দেয়া, অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি না চালানো এবং সড়কে শিক্ষার্থীসহ সকল যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তাছাড়া শিক্ষার্থীরা ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বর্জন ও পরীক্ষা স্থগিতেরও দাবি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিকৃবি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের আন্দোলন মেনে নিয়ে সকল ক্লাস বর্জন এবং পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা দিয়েছে।

এ বিষয়ে সিকৃবি বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সহকারী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম জানান, আমাদের ছাত্র ওয়াসিম হত্যার প্রতিবাদে আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আমরা ২৭ মার্চ পর্যন্ত সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমরা চাই আমাদের ছাত্র ওয়াসিম হত্যার বিচার হোক।

প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যার দিকে সিকৃবি শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাসকে উদার পরিবহনের একটি বাস থেকে ঢাকা-সিলেট রোডের শেরপুর এলাকায় ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাসের হেল্পার ফেলে দেয়। ঘটনাস্থলেই বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ওয়াসিমের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ড্রাইভার এবং সহকারীকে আটক করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত