নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ১৮:২৫

সিলেটে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণ

বৈশাখের তপ্ত রোদে হইহুল্লোড়, নাচ, গান, মেলা, যানজট, আড্ডা, ঘোরাঘুরি করে নববর্ষ উদযাপন করছেন সিলেটবাসী। শুধু অনুষ্ঠানস্থলে নয় বৈশাখের ছোঁয়া লেগেছে অলি-গলি, পাড়া- মহল্লায়ও। যে যার মত বৈশাখী আভুষণ পরে বেরিয়ে পড়েছেন। রোদের প্রখরতা কিংবা যানজটের তীব্রতা কিছুই যেন থামাতে পারছে না বৈশাখের আনন্দ উচ্ছ্বাসকে। এ যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণ।

বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। আবহমান বাংলার চিরন্তন শাশ্বত মিলনোৎসব এই বৈশাখ।  যা জাতী, ধর্ম, ধনী, গরিব, নির্বিশেষে সবাই উদযাপন করে। সবাই সবার সাধ্যমত বাংলা নতুন বছরের ১ম দিনটিকে বরণ করে নেয়। সিলেটেও নানান আয়োজনে বরণ করা হয়েছে বৈশাখকে।  

প্রতি বছরের মতো এবারও নববর্ষের সবচেয়ে বড় সমাগম ঘটেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমসি কলেজে। শুধু শিক্ষার্থীরা নন বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ ভিড় করেন এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে বর্ষবরণে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। সকালে সম্মিলিতভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ।

সিলেটে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের কথা আসলেই উঠে আসে আনন্দলোকের নাম। এবারও এই রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দালোক  শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ মাঠে আয়োজন করেছে বর্ষবরণ উৎসব। সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নাচে-গানে আনন্দলোক মাতিয়ে রাখেন শিল্পীরা। 

প্রতিবছরের মতো এবারও ব্ল-বার্ড স্কুল মাঠে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রুতি। ‘আসবে পথে আঁধার নেমে তাই বলে কি রইবি থেমে’ শীর্ষক আয়োজন চলে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত। শত কন্ঠে বৈশাখের গান, লোক নাচসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে ব্লু-বার্ড স্কুল মাঠেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।

সকাল আটটায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এছাড়াও নগরের চাঁদনিঘাট এলাকায় পক্ষকাল ব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। নগরের প্রাণ কেন্দ্রে এই মেলাকে ঘিরেও মানুষজনের উৎসাহ উদ্দিপনার কমতি ছিল না।

এদিকে নগরের পূর্ব শাহি ঈদগাহ এলাকায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৫শতাধিক কণ্ঠে গান গেয়ে বর্ষ বরণ করা হয়। বাউলগান, কাটি ও ঝুমুর নৃত্য, লোকগান, দেশের গান, মণিপুরি নৃত্যসহ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে দর্শদের বিনোদন দেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা।

‘ভেঙে ফেলো পায়ের বেড়ি, নব আকাশে বাজলো ভেরি’ এই শ্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে দুপুর ২টায় থেকে শুরু হয় উদীচীর বর্ষবরণ উৎসব। বাঙালির এই চিরায়ত উৎসবকে বরণ ও উদযাপন করতে উদীচী সিলেটর ছিল বাহারি আয়োজন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দুপুর ২টায় উৎসবের উদ্বোধন হয়। উৎসব উদ্বোধন করবেন- প্রয়াত পন্ডিত রামকানাই দাসের প্রবীণ যন্ত্রশিল্পী ক্ষীতিশ দাশ।

এদিকে নগরের নয়া সড়ক এলাকার কিশোরী মোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন একদল ফিনিক্সের বৈশাখি আয়োজন শুরু হয় সকাল ৭টায়। গান, আবৃত্তি, নৃত্য, বাংলার ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা, পালাগান, কাটিনৃত্য, ধামাইলগান ও পুঁথিপাঠের মাধ্যমে শেষ হয় একদল ফিনিক্সের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

শহরতলীর কামাল বাজার এলাকায় লিডিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসও ও মুখড় ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা ও বৈশাখী আয়োজনে।  মেলা, বাউলগান, পুতুল নাচ, সাপ খেলা, বানর খেলা, জাগলিং, বায়স্কোপ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা,  গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্রের প্রদর্শনীসহ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন উপভোগ করেন সবাই।

শহরতলির বটেশ্বরে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বর্ণিল আয়োজন করা হয়। নাচ, গান, বৃষ্টিবন্দনা, আবৃত্তি, পুঁথিপাঠের পাশাপশি সাপখেলা, বানরনাচ, পুতুলনাচ, বায়স্কোপে বেশি উপভোগ করেন এখানে আগত মানুষজন।

বৈশাখের এই উচ্ছাস ছড়িয়ে পরে সিলেটের চা বাগানগুলোতেও । বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে লাক্কাতুরা চা বাগানে আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী চরকপূজার ও বৈশাখী মেলার। এই চরকপূজা দেখার জন্য চা বাগানের বাসিন্ধদের পাশপাশি সিলেট শহর ও আশপাশের এলাকা থেকেও অনেক মানুষ ভিড় করেন লাক্কাতুরা চা বাগানে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত