নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ এপ্রিল, ২০১৯ ২২:১৫

চা বাগানে চড়ক পূজা

চা বাগানের টিলা, গাছ থেকে অপলক দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে আছেন একটি কাঠের দণ্ডের দিকে।  প্রায় ৩০ ফুট উচু এই কাঠের দণ্ডে দুজন মানুষ পিঠে বর্শি গেঁথে ঝুলছেন। চারিদিকে উলুধ্বনি করছেন নারীরা। সাথে শঙ্খধ্বনি ও ঢাকঢোল বাজছে। পূজারীরা পাশ থেকে বাতাসা, নকুলদানা, কলা ছিটিয়ে দিচ্ছেন ভক্ত-দর্শকের দিকে। সিলেটের লাক্কাতুড়া চা বাগানের খেলার মাঠে এই রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখছিলেন সবাই।  

রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের দিন বিকালে ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সেখানে জড়ো হন হাজারো মানুষ।


চড়ক পূজা চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজার মূল উপাদান কাঠের দণ্ডটি একটি চড়ক গাছ। সারা বছর এটি পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। লাক্কাতুরার চড়ক পূজায় দুইজন কালী, একজন শিব, একজন পারবতী সাজেন। কালী দুজন পূজার সময় তাণ্ডব নৃত্য করেন। শিব কলাগাছের উপরে রাখা কয়েকটি ধারালো দা এর উপর শুয়ে থাকেন তার উপর কালী এসে দাঁড়িয়ে নৃত্য করেন। এ ধরনের রোমাঞ্চকর অনেক কসরত করা হয় এই পূজায়। সব শেষে কালী তার অস্ত্র পূজারীর কাছে সমর্পন করেন এবং চড়ক পূজার মূল আকর্ষণ গায়ে বর্শি গেঁথে দুজন যুবক ঝুলতে থাকেন।

চড়ক পূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। এই পূজার রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসবের প্রচলন আছে।

এই চড়ক পূজার শুরু কবে থেকে তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বিরা বলেন এই পূজার ইতিহাস হাজার বছরের।  

হিন্দু ধর্ম মতে চৈত্র মাসের শেষ থেকে বৈশাখ মাসের প্রথম পর্যন্ত ভক্তরা মহাদেব শিবঠাকুরের আরাধনা করতে থাকেন। মহাদেবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় সপ্তাহব্যাপী নানান পূজার আয়োজন করেন তারা। ফলপূজা, কাদা পূজা, নীল পূজাসহ সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন পূজা পালন শেষে আয়োজন করা হয় চড়ক পূজার।                                                                     

লাক্কাতুরা চা বাগানে চড়ক পূজা দেখতে চা বাগানের বাসিন্দারা ছাড়াও সিলেট শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে আসা নানা ধর্মের লোকের সমাগম ঘটে।

পূজা দেখতে আসা কালাগুল চা বাগানের মনি কালুয়ার বলেন, শিবের পূণ্য লাভের জন্য পূজা দেখতে এসেছি। এই পূজা বছরে একবার হয় তাই কষ্ট করেই এসেছি পূন্য পাওয়ার জন্য।

সিলেট শহর থেকেও এই পূজা দেখতে গিয়েছেন অনেক মানুষ। নগরের শিববাড়ি এলাকার সৌরভ দেব বলেন, এই পূজার কথা শুনেছি। কখনো দেখি নাই। তাই আজ দেখতে এসেছি। এটা অনেক দুঃসাহসিক পূজা। আমাদের এই ঐতিহাসিক পূজা দেখতে পেরে ভাল লাগছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত