নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:১৯

তামাবিল স্থলবন্দরের অবকাঠামো নিয়ে ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ

২০০২ সালে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার ১৫ বছর পর ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে সিলেটের প্রথম স্থলবন্দর। তবে বন্দরটির অবকাঠামো উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট মনোযোগী নয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে ভারতের পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় প্রায় ছয় মাস ধরে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় ব্যাপকভাবে কমেছে আমদানি কার্যক্রম।

তামাবিল স্থলবন্দরের একাধিক আমদানিকারক জানান, শুল্ক স্টেশন থেকে তামাবিলকে স্থলবন্দরে উন্নীত করা হলেও কোনো বাড়তি সেবা পাচ্ছেন না তারা। বন্দর এলাকায় নেই ব্যাংকের কোনো শাখা। সড়কের অবস্থাও নাজুক। ভাঙাচোরা সড়ক সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সে সময় পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যায়।

এদিকে অতিরিক্ত ফি নেয়ার অভিযোগে বন্দরের ডাম্পিং ইয়ার্ড ব্যবহার করছেন না ব্যবসায়ীরা। আমদানি পণ্য মজুদের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ডাম্পিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থা করছেন তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তামাবিল এলাকার সরকারি জমি দখল করে অনেক ব্যবসায়ী ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি করেছেন। অনেকে বন বিভাগের জমি দখল করে গাছ কেটে মজুদ করছেন আমদানি করা পাথর ও কয়লা। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে ওই এলাকার পরিবেশ।

তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মূলত কয়লা ও পাথর আমদানি হয়। এর মধ্যে ভারতীয় পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে কয়লা আমদানি। ফলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আরো কমেছে।

তামাবিল কয়লা আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস উদ্দিন লিপু বলেন, শুল্ক স্টেশন থাকাবস্থায় নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্য আমদানি করা যেত। এখন বন্দর হওয়ার পর তামাবিল দিয়ে সব ধরনের পণ্যই আমদানি-রফতানি করা যায়। তবে স্থানীয়দের প্রায় সবাই কয়লা ও পাথর আমদানিকারক। এ দুই পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগের সমস্যা রয়েই গেছে।

একাধিক ব্যবসায়ী বিভিন্ন মাশুল নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন। তারা জানান, স্থলবন্দর উদ্বোধনের পর থেকে আমাদানি-রফতানিতে টনপ্রতি বাড়তি ২০০ টাকা করে আনুষঙ্গিক চার্জ (মাশুল) দিতে হচ্ছে। এছাড়া শুক্র ও শনিবার আমদানি-রফতানি করা পণ্যের বিপরীতে হলিডে চার্জ হিসেবে অতিরিক্ত আরো ১ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে এখন আমদানি করা পণ্যের মধ্যে পাথর ও কয়লার পরিমাণই বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক জটিলতা কাটিয়ে তামাবিল বন্দরকে সচল রাখা গেলে এ বন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে নতুন নতুন আরো অনেক পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে।

তবে শুল্ক ও মাশুল নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার পার্থ ঘোষ। তিনি বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে অভ্যস্ত নন। এ কারণে স্থলবন্দরের শুল্কের ব্যাপারেও তারা অবগত নন। এছাড়া সিলেটের শুল্ক স্টেশনগুলোর সঙ্গে স্থলবন্দরের শুল্ক হারে তারতম্য থাকায় ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্ত হন। ডাম্পিং ইয়ার্ডের ভাড়াও যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা বন্দরের ডাম্পিং ইয়ার্ড ব্যবহার করছেন না বলে মনে করেন পার্থ ঘোষ।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থলবন্দর এলাকায় কোনো ব্যাংকের শাখা না থাকায় তাদের সিলেট, জাফলং বা জৈন্তাপুর গিয়ে লেনদেন করতে হয়। জরুরি লেনদেনের প্রয়োজন হলে ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হয়।

এ ব্যাপারে পার্থ ঘোষ বলেন, শাখা চালুর ব্যাপারে একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। একটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জায়গাও দেখে যাওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত একটি শাখা চালু হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত