হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

২৪ এপ্রিল, ২০১৯ ০১:৩১

হবিগঞ্জে কলেজছাত্রকে হত্যার পর খাটের নিচে মাটিতে পুতে রাখে প্রেমিকা

আদালতে বাবা ও মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে কলেজ ছাত্র উজ্জল মিয়াকে (২২) কে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তার কথিত প্রেমিকা ফারজানা আক্তার। মঙ্গলবার ফারাজানা ও তার বাবা মঞ্জু মিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। এরপর শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রিট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন বাবা ও মেয়ে। এর আগে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা দিয়ে কলেজ ছাত্রী ফারজানা আক্তার ও তার পিতা মঞ্জু মিয়াকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে ফারজানার মাকে আটক করে লাখাই থানা পুলিশ। নিহত উজ্জলের বাবা শাহ আলম বাদী হয়ে এই তিনজনসহ আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, ফরাজানা ও তার বাবা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।

তিনি আরো জানান, একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রাখায় ফারজানা আক্তার উজ্জল মিয়াকে খুন করে তার ঘরের খাটের নিচে মাটি খুড়ে পুতে রাখে। পরদিন ফারজানা ঢাকায় তার বাবা-মার কাছে চলে যায় সেখানে গিয়ে এ হত্যার ঘটনা জানায়। ১০-১২ দিন পর তার বাবা-মা বাড়িতে এসে আরও কয়েকজনকে নিয়ে লাশ তুলে বস্তার ভিতরে ভরে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দুরে মেদি বিলে কচুরিপানার নিচে রেখে আসে।
 
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উজ্জল লাখাইয়ের সঈদ উদ্দিন কলেজের ডিগ্রি ৩য় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে ফারজানা আক্তার হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী। এক বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। ফারাজানা বাড়িতে একা বসবাস করত। তার বাবা-মা ও ছোট দুই বোন ঢাকাতে থাকতেন। এই সুবাদে উজ্জল প্রায়ই ফারজানার বাড়িতে আসতেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফরাজানার বাড়িতে আসেন ফরাজনা। এসময় উজ্জলের মোবাইলে অন্য নারীর একটি ফোন আসে। তাদের আলাপচারিতায় ফারজানা বুঝতে পারে উজ্জলের আরেক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে হাতা-হাতির ঘটনা ও ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উজ্জ্বলকে হত্যার পরিকল্পনা করে ফারজানা।

পরিকল্পনা মোতাবেক ওই দিন গভীর রাতে ফারজানা প্রথমে উজ্জলের মাথায় আঘাত করে। এতে তার মৃত্যু নিশ্চিত না হলে দা দিয়ে হাত পায়ের রগ কেটে পরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে তার এক চাচাকে এন লাশ ঘরের মাটি খুড়ে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন তার পিতা মাতার কাছে চলে যায়।

ফারজানার পিতা মঞ্জু মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে জানায়, ‘আমি হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। আমার মেয়েকে বাচাঁতে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ লুপাট করতে আমি আমার মৃত দেহ বস্তাবন্দি করে মেদি বিলে কচুরীপানার নিচে রেখে আসি।

উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি লাখাই উপজেলার মুড়াকড়ি গ্রামের শাহ্ আলমের পুত্র সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র উজ্জল মিয়া নিখোঁজ হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি লাখাই থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে এবং নিখোঁজ উজ্জলের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে তারা নিশ্চিত হয় মোড়াকড়ি ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী ফারজানা আক্তারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পুলিশ রবিবার সকালে ধর্মপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফারজানা ও তার পিতাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সোমবার সকালে ফারাজানা হত্যার কথা স্বীকার করে। সোমবার দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্মপুর গ্রাম থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মেদি বিলের কচুরিপানার নিচ থেকে উজ্জলের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ফারজানার বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, উজ্জল ও ফারজানার মাঝে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। চাকুরির কারণে ফারজানার মা-বাবা ঢাকায় থাকেন। ফারজানা বাড়িতে একা থাকে। এ সুযোগে প্রায়ই তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক চলে আসছিল। আটক ফারজানা ধর্মপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার কন্যা ও নিহত উজ্জল মোড়াকড়ি গ্রামের শাহ আলমের পুত্র।

লাখাই থানার ওসি এমরান হোসেন জানান, বাকী আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। ফারজানার মাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত