গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি

২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ১৮:০১

গোয়াইনঘাটে গোচারণ ভূমি দখলের পায়তারা, এলাকায় উত্তেজনা

সিলেটের গোয়াইনঘাটে ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের সাতকুড়ি কান্দি মৌজায় গোচারণ ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ব্যক্তি বিশেষদের নামে বন্দোবস্ত করে দখলের পায়তারার চলছে। এই ঘটনায় ডৌবাড়ী এলাকা খেটে খাওয়া কৃষক শ্রমিক এবং গবাদি পশু পালনকারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছেন সাতকুড়ি কান্দি এলাকার সাধারণ মানুষজন।

সরজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, উপজেলার ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের সাতকুড়ি কান্দি মৌজাধীন জে.এল. নং-২৫, খতিয়ান নং- ০১, দাগ নং- ১১৩ এ অন্তভূর্ক্ত ১২২.৭০০০ ভূমি গোচারণ শ্রেণীর ভূমি হিসাবে বৃটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে স্থানীয় বাসিন্ধার ব্যবহার করে আসছেন। যুগ যুগ ধরে সাতকুড়ি কান্দি এলাকার মানুষজন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াসহ গোচারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন।

শুধু সাতকুড়ি কান্দিই নয় আশপাশের ইউনিয়ন গুলোর পশু পালনেও উক্ত গোচারণ ভূমিটি ব্যবহার হয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক কালে এলাকার চিহ্নিত কিছু ভূমিখেকো চক্রের সদস্য এটি দখলের পায়তারা করছে। স্থানীয় ঠিকাদার বিএনপি নেতা লোকমান উদ্দিন, আজমত উল্লাহ গংসহ একটি চক্র উক্ত গোচারণ ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে তাদের নামে বন্দোবস্ত নিয়ে যায় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এদিকে এলাকার বৃহৎ জনগোষ্টীর ব্যবহারকৃত এই গোচারণ ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে অবৈধভাবে বন্দোবস্ত নেয়ার ঘটনায় ফুসে উঠেছেন মানুষজন। এ ঘটনায় তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে উক্ত বন্দোবস্ত বাতিল করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেন। শুরু হয় মামলা পাল্টা মামলা। সরকারের দেয়া প্রদত্ত নিয়মে পাওয়া গোচারণ ভূমির প্রথাগত অধিকার হারিয়ে সাতকুড়ি কান্দিবাসী আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আদালতে মামলা চলে বিবাদী বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, সাতকুড়ি কান্দি মৌজার উক্ত ভূমি ২৬/০৬/২০১৪ ইং সালের পর্চায়ও গোচারণ ভূমি হিসাবে লিপিবদ্ধ করা আছে। এরই মধ্যে তারা আইনি প্রতিকারে একটি মামলা দায়ের করেন।

১৯৯১ সালে একটি স্বত্ব মামলায় গোচারণ ভূমি থেকে শ্রেণী পরিবর্তন করে বোরো আবাদের খাস বন্দোবস্ত আনেন কয়েকজন। ১৯৯৮ সালে বন্দোবস্ত প্রাপ্তদের পক্ষে রায়ও হয়। পরবর্তীতে মামলা নং-১২৯/১৯৯৮ দায়ের করেন ক্ষতিগ্রস্থ গোচারণ ভূমির ভোগদখলকারী সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসী। এই মামলায় সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে গোচারণ ভূমির পক্ষে রায় হয় ২০০৭ সালে। অত:পর কতিপয় ভূমিখেকোরা আবার হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিল মামলা নং-২৫৬৫/২০০৭। এই মামলাটিও ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে খারিজ হয় এবং রায় হয় সাতকুড়িকান্দি গোচারণ ভূমির দাবিরত গ্রামবাসীর পক্ষে।

অবশেষে গোচারণ ভূমির ভোগদখলকারী সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসী ল্যান্ড সার্ভে ট্র্যাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২৫২/২০১৮। উক্ত মামলায় বিবাদী করা হয়  ডাকাতিকান্দির তাহির আলীর ছেলে লোকমান উদ্দিন, চারগ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন,বলেশ্বর গ্রামের হরমুজ আলীর ছেলে ময়ুর, নিহাইন গ্রামের সিকন্দর আলীর ছেলে মস্তাক গংদের। এই মামলাটি এখনও বিচারাধীন রয়েছে।

গোচারণ ভূমি ব্যবহারকারী সাতকুড়িকান্দি গ্রামের কৃষক  শহিদ মিয়া, ইসমাই আলী, আজির উদ্দিন বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে ডাকাতিকান্দি, বলেশ্বর, নিহাইন, হাতিরকান্দি, চারগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের ভূমিখেকোরা একত্রিত হয়ে আমাদের ভোগ দখলীয় গোচারণ ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে বন্দোবস্ত নিয়া দখলের পায়তারা করেও নিতে পারেনি। এ বিষয়ে আমরা আদালতের স্বরণাপন্ন হই এবং আদালত আমাদের পক্ষেই রায় দেন। এই ভূমি দখল হলে আমরা কৃষকরা কোথায় যাবো। আমাদের গৃহপালিত পশু কোথায় লালন পালন করবো।

একই এলাকার জমির উদ্দিন, ইমাম উদ্দিনদের বলেন,  আমাদের দখল থাকা স্বত্বেও অবৈধ যোগসাজশে  শ্রেণী পরিবর্তন করে ডাকাতিকান্দির লোকমান উদ্দিন গং ভূমিখেকোরা উক্ত ভূমি দখলে নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। অনতি বিলম্বে এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।

সাতকুড়িকান্দির উক্ত গোচর ভূমি শ্রেণী পরিবর্তনকারীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন সহাকারী ভূমি কর্মকর্তা (মানিকগঞ্জ) নিত্যানন্দ জানান, উক্ত ভূমি গোচারণ শ্রেণীর এবং উক্ত ভূমি সাতকুড়িকান্দি গ্রামবাসী সুদীর্ঘ কাল থেকে তাদের গোচারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন বলে আমরা অবহিত। সম্প্রতি স্মারক নং-৬৮০২, তারিখ-১৭/১২/১৯৯০ সাল মূলে উক্ত ভূমি শ্রেণী পরিবর্তন হয়েছে মূলে একটি নমুনা কপি লোকমান উদ্দিন গংরা সরবরাহ করেছেন।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, সাতকুড়িকান্দি বিষয়টি নিয়ে পরস্পর মামলা আদালতে বিচারাধীন। আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত