ছাতক প্রতিনিধি

০৮ মে, ২০১৯ ১৬:৩২

ঝড়ে উড়ে গেছে টিন, খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পাঠগ্রহণ

সিলেটের ছাতকে খোলা আকাশের নিচে নিয়মিত পাঠগ্রহণ করছে শহরের ফকিরটিলা মরহুম সুনু মিয়া চৌধুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত দু’ সপ্তাহ ধরে পাঠগ্রহণের পাশাপাশি খোলা আকাশের নিচে প্রথম সাময়িক পরীক্ষাও দিয়েছে তারা। প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া কিংবা পরীক্ষা দেয়া থেকে বিরত হয়নি।

গত ১৭ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেলে অদ্যাবধি খোলা আকাশের নিচে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি থেকে শিশুদের বাঁচাতে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে সিমেন্টের বস্তায় তৈরি ত্রিপল টানিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। টানানো ত্রিপলটি রোদ-বৃষ্টির কোনটিই বাঁধা হতে পারেনি। ফলে রোদ-বৃষ্টির প্রতিকুল পরিবেশেই চলছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার কাজ।

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রধান শিক্ষকসহ ৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশীর ভাগই বঞ্চিত বেদে সম্প্রদায়ের শিশু। এ ছাড়া ফকিরটিলা, রাজগাঁও, টেকি, বেদে পল্লী ও কাটা বিল সংলগ্ন এলাকার শিশুরা এ বিদ্যালয়ে আসে লেখাপড়া করতে। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এ বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বঞ্চিত ও ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে ২০০৯ সালে শহরের ফকিরটিলা এলাকায় একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকন। তিনি তার পিতা মরহুম সুনু মিয়া চৌধুরীর নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করেন। এ বিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকনের নজরদারিতে প্রতিষ্ঠার ১০ বছর ধরে সন্তোষজনক ফলাফলও করে আসছে বেসরকারি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তবে বিগত দু’বছর ধরে সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় দেখা দিয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ে চালা উড়িয়ে নেয়ায় চালা পুনঃ স্থাপন করার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। ফলে গত দু’সপ্তাহ ধরে খোলা আকাশের নিচেই চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাবনাজ সুলতানা জানান, বিদ্যালয়ে তিনিসহ আরও ২ জন শিক্ষিকা নিয়মিত পাঠদান করে আসছেন। বিগত ২ বছর ধরে তারা কোন বেতন পাচ্ছেন না। শুধু শিশুদের মুখের দিকে চেয়ে এবং বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হবে এ প্রত্যাশায় তারা সব কষ্ট সহ্য করে নিয়মিত পাঠদান করে যাচ্ছেন।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বসার মতো কোন চেয়ার-টেবিল ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নেই। নেই বিদ্যুৎ ও পানির সুব্যবস্থা। ওয়াসরুম না থাকায় অনেক সময় তাদের মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হয়। বিদ্যালয়টি দ্রুত সরকারীকরণের দাবী জানাচ্ছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল মিয়া বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে এ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। ৩য় ধাপে এ বিদ্যালয়টি সরকারীকরণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা হয়নি। বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করা হলে বিদ্যালয়ের আশপাশের ৭-৮টি গ্রামের বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উন্মোচিত হবে শিশু শিক্ষার আরও একটি নতুন জানালা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত