রিপন দে, মৌলভীবাজার

০৯ মে, ২০১৯ ০১:৩৬

লাউয়াছড়ায় মোবাইল ফোনের টাওয়ার: পক্ষে মন্ত্রী, বিপক্ষে প্রাণীবিশেষজ্ঞরা

মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের দুই কিলোমিটারের ভিতর ডলুছড়া এলাকায় মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানি। সংরক্ষিত একটি বনে মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানোর ফলে লাউয়াছড়া বন ও বনের বণ্যপ্রানী হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বনবিভাগ বলছে টাওয়ারের রেডিয়েশনের কারণে পাখিদের ডিম নষ্ট হয়ে যাবে তবুও এই টাওয়ারের পক্ষে যুক্তি দেখালেন আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

মোস্তাফা জব্বার টাওয়ারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে নিজের ফেইসবুক ওয়ালে লেখেন “আমি অন্তত একটি বিষয় বুঝতে পারিনা যে, ডিজিটাল যুগে বসে আমাদের ভাবনাটা এতো পেছনে কেন? লাউয়াছড়ায় টেলিটকের টাওয়ার বানানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই টাওয়ারে গাছপালা ও বণ্যপ্রাণীর নাকি ক্ষতি হবে। আমি বুঝিনা, টাওয়ার ছাড়া লাউয়াছড়ায় মানুষ কিভাবে নেটওয়ার্ক পাবে। ওখানে যদি টাওয়ার ক্ষতিকারক হয় তবে মানুষ যেখানে বাস করে সেখানে টাওয়ার কেন? সব টাওয়ার বন্ধ করে দিলে কেমন হয়!”

জানা যায়, লাউয়াছড়া বনের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ডলুছড়ার অবস্থান। ডলুছড়ায় মোবাইল টাওয়ারের কাজ করছে টেলিটোক, ইতিমধ্যে টাওয়ার স্থাপনের জন্য মাটি কেটে বড় বড় গর্ত তৈরী করেছেন শ্রমিকরা। টাওয়ার তৈরির জন্য আনা হয়েছে রড৷ তবে সেখানে শ্রমিক ছাড়া টেলিটকের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এই টাওয়ার বসানোর হলে লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের এবং প্রাণীবিশেষজ্ঞদের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী ড. বিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খান জানান, রেডিয়েশন যেকোন প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। একটি সংরক্ষিত বন বণ্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত। প্রাণীদের জন্য তো টাওয়ারের দরকার নেই তাহলে সেখানে কার জন্য টাওয়ার নির্মাণ করা হবে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ ধ্বংস করে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না সেখানে সংরক্ষিত বনে মোবাইল ফোনের টাওয়ার নির্মাণের সুযোগ তারা কি করে পেল?

এ ব্যাপারে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব আবুল হাসান বলেন, এমনিতেই লাউয়াছড়া নানান কারণে হুমকির সম্মুখীন, তার উপর যদি এভাবে মোবাইলের টাওয়ার স্থাপন করা হয় তাহলে রেডিয়েশনের প্রভাবে পাখিদের ডিম নষ্ট হবে। প্রাণীদের জীবন যাত্রায়ও প্রভাব পড়বে৷ তাই এই এলাকায় টাওয়ার স্থাপন থেকে টেলিটককে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি৷

টাওয়ার স্থাপন কাজের ঠিকাদার অশোক জানান, এখানে টেলিটক কোম্পানির টাওয়ারের কাজ চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন আছে কিনা তা জানতে চাইলে কোন উত্তর দেননি।

‍সিলেট পরিবেশ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, আমরা এই রকম কোন অনুমোদন দেইনি। তবে সংরক্ষিত বনের ক্ষেত্রে অবশ্যই বনবিভাগ দেখে।

এ ব্যাপারে সহকারী বন-সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের ভিতরের ভিতরে এমন মোবাইল টাওয়ার বসানোর কোন অনুমতি নেই। কোম্পানির টাওয়ারের রেডিয়েশনের প্রভাবে পাখির ডিম ও বন্যপ্রাণির জীব-বৈচিত্র্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এছাড়াও বনে টাওয়ার বসালে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী থাকে। এতে গাছচোর চক্র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই বনে অপকর্ম করতে পারে। আমরা এখানে কোন অবস্থাতেই টাওয়ার বসাতে দেবো না।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ)শামসুল মোহিত চৌধুরী জানান, আমরা বিশেষজ্ঞজদের সাথে কথা বলছি। তারা যদি বলেন, টাওয়ার বনের জন্য ক্ষতিকর তাহলে আমরা বন্ধ করে দেব তবে বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। টাওয়ারের জন্য আমাদের থেকে কোন অনুমোদন তারা নেয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত