হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

০৯ মে, ২০১৯ ১৭:২২

আইসিটি মন্ত্রীর বক্তব্যে পরিবেশবাদিদের ক্ষোভ

লাউয়াছড়ার পাশে মোবাইল টাওয়ার

লাউয়াছড়ায় মোবাইলের টাওয়ার বসানো নিয়ে তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পরিবেশবাদিরা।

সম্প্রতি মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বন লাইয়াছড়ায় মোবাইলের টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু করে রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেলিটক। এই টাওয়ারের রেডিয়েশনে বনের প্রাণীদের ক্ষতির আশঙ্কা করে টাওয়ার বসানোতে আপত্তি জানান পরেবেশবাদী ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এনিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

টাওয়ার স্থাপনে এই আপত্তিতে ক্ষুব্দ হয়ে গত বুধবার সন্ধ্যায় তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লিখেন- “আমি অন্তত একটি বিষয় বুঝতে পারিনা যে, ডিজিটাল যুগে বসে আমাদের ভাবনাটা এতো পেছনে কেন? লাউয়াছড়ায় টেলিটকের টাওয়ার বানানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই টাওয়ারে গাছপালা ও বণ্যপ্রাণীর নাকি ক্ষতি হবে। আমি বুঝিনা, টাওয়ার ছাড়া লাউয়াছড়ায় মানুষ কিভাবে নেটওয়ার্ক পাবে। ওখানে যদি টাওয়ার ক্ষতিকারক হয় তবে মানুষ যেখানে বাস করে সেখানে টাওয়ার কেন? সব টাওয়ার বন্ধ করে দিলে কেমন হয়!”

এদিকে মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা মোবাইল টাওয়ারের কাজ অভিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সিলেট বিভাগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমককে বলেন, যেখানে আমরা লাউয়াছড়ার রেলপথ ও স্থাপনা সরানোর জন্য আন্দোলন করছি এবং সাম্প্রতিক সময়ে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আমাদের সাথে একমত পোষন করেছেন সেখানে লাউয়াছড়ায় মোবাইলের টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত বন ধ্বংসের পায়তারা বলেই মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, মোস্তাফা জব্বার একজন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে সারাদেশেই নেটওয়ার্ক বসাতে চাচ্ছেন। সংরক্ষিত বনাঞ্চালে টাওয়ার বসালে যে মোবাইল নেটওয়ার্কের রেডিয়েশনের প্রভাবে প্রাণীদের জীববৈচিত্রে প্রচুর সমস্যা হয় তাও মন্ত্রীকে বুঝতে হবে।

লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক জলি পাল বলেন, লাউয়াছড়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাছে এরকম টাওয়ার বসানো বন্যপ্রাণীদের জন্য হুমকি স্বরুপ। পাখির ডিমসহ বনপ্রাণীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা মোবাইল টাওয়ার বসানোর বিপক্ষে নই। তবে সেটা যেন বনের বাইরে হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন ও বন্যপ্রানী রক্ষায় নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে উনার মন্ত্রী সভার একজন মন্ত্রীর এরকম বক্তব্য কিভাবে ফেসবুকে লিখেন। আইসিটি মন্ত্রীর হয়তো বা ধারনায় নেই লাউয়াছড়ায় মোবাইলের টাওয়ার বসালে কি ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হবে বন্যপ্রাণী ও তাদের জীববৈচিত্র। উনার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আশা করা যায় না।

লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা ও ইকো ট্যুর গাইড সাজু মারছিয়াং বলেন, মন্ত্রীর ফেসবুক পোস্টটি দুঃখজনক, টাওয়ার বসানোর কি জায়গার অভাব পড়েছে? লাউয়াছড়া বন থেকে সরিয়ে টাওয়ার বসালে আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু বনে বা বন ঘেঁষে টাওয়ার বসানো কোনভাবেই উচিত হবে না৷

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড মনিরুল এইচ খান জানান, রেডিয়েশন যেকোন প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। একটি সংরক্ষিত বন বণ্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত। প্রাণীদের জন্য তো টাওয়ারের দরকার নেই তাহলে সেখানে কার জন্য টাওয়ার নির্মাণ করা হবে?

এদিকে সরেজমিনে লাউয়াছড়ার পাশ্ববর্তী ডলুছড়া এলাকায় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা রাখা হয়েছে টাওয়ার তৈরী করার জন্য আনা রড, পাথর৷ বড় গর্ত খুড়া হয়েছে আগেই। মাটি রাখার ঝুড়িগুলোও ফেলে রাখা হয়েছে গর্তের ভিতর৷ তবে বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে কোন শ্রমিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি৷

টেলিটকের টাওয়ার বানানোর কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী প্রিয়ব্রত ধর বলেন, আমাদের প্রধান কার্যালয় থেকে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ এসেছে তাই আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি৷ পরবর্তীতে যদি আমাদের অফিস পুনরায় নির্দেশ দেয় তখন আমরা আবার কাজ শুরু করব৷

আপনার মন্তব্য

আলোচিত