নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ মে, ২০১৯ ০০:০৪

সিলেট চেম্বারের স্থগিতাদেশ আপীল বিভাগেও বহাল

সিলেট চেম্বার অব কমার্সের মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা স্থগিত করেছিলো উচ্চ আদালত। সেই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে চেম্বারের পক্ষ থেকে আপীল করা হয়। সোমবার শুনানি শেষে স্থগিতাদেশ বহাল রাখে হাইকোর্টের আপীল বিভাগ। সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেইন, বিচারপতি হাসান সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি নুরুজ্জামানের সমন্বয়ে হাইকোর্টের পূর্ণ বেঞ্চ চেম্বারের মেয়াদ বৃদ্ধির উপর স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।

সে হিসেবে চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে সিলেট চেম্বারের বর্তমান কমিটির মেয়াদ।

সিলেট চেম্বারের মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন চেম্বারের সাবেক পরিচালক তাহমিন আহমদ। তাঁর রিটের প্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল চেম্বারের মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশনা স্থগিত করে উচ্চ আদালত। বিচারপতি হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল গঠিত সমন্বয় বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বানিজ্য মন্ত্রনালয়কে কারণ দর্শাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল সিলেটের ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী বোর্ড ও আপীল বোর্ড গঠন করা হয়। তবে ভোটারদের কাগজপত্র যাচাইবাছাই কালে ৮৮ জন ভূয়া ভোটার সনাক্ত করে নির্বাচনী বোর্ড। ভূয়া ভোটার তালিকার কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করে।  

নির্বাচন স্থগিতের পর ভোটার তালিকা বাছাইয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ৩০ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা সরজমিনে সিলেট চেম্বার পরিদর্শন করে অনিয়মের প্রমাণ পান। তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ শতাংশ সদস্যই ভুল তথ্য ও জালিয়াতি করে সংগঠনটির ভোটার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. জালাল উদ্দিন গত ১৭ এপ্রিল এই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।

এদিকে নির্বাচন পেছাতে ৪ এপ্রিল বাণিজ্যমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেন চেম্বার সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ। ওই আবেদনে সুপারিশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ভোটার তালিকা সংশোধনকল্পে এই পরিষদের ৩ মাসের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচনের জন্য সিলেট চেম্বারের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৩ মাস সময় বাড়িয়ে দেয় মন্ত্রণালয়।


গত ২৫ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (২০১৯-২০২১) সালের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ও আপীল বোর্ড পুণর্গঠন করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানকে। আর আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদকে।

এর আগে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বিজিত চৌধূরী ও আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীনকে।

ভূয়া ভোটার রেখে নির্বাচন আয়োজন ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সময়বৃদ্ধির নির্দেশনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন তাহমিন আহমদ। তার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সিলেট চেম্বারের সকল কার্যক্রম স্থগিত এবং বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে কারন দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এই স্থগিতদাদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজের দ্বরাস্থ হয় সিলেট চেম্বার।

চেম্বার জজ আদালত এ ব্যা্পারে কোনো নির্দেশনা না দিলে হাইকোর্টের আপীল বিভাগে সিলেট চেম্বারেের পক্ষ থেকে আপীল করা হয়। সোমবার সেই আপীলও খারিজ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে রিটকারী তাহমিন আহমদ জানান, ভূয়া ভোটার প্রমাণিত হওয়ার পরও নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড়ে আমরা আদালতের শরনাপন্ন হয়েছিলাম। আদালত চেম্বারের সকল কার্যক্রম স্থগিত এবং বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে কারণ দশানোর নির্দেশ দিয়েছেন। যা আপীল বিভাগ বহাল রেখেছেন।

ফলে আগামী ৩০ মে চেম্বারের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত