হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

১৯ মে, ২০১৯ ১৫:৪০

কেমন আছে পরী?

সদ্য জন্মগ্রহন করা পরীর মত একটি শিশুকে মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়ার রাস্তার পাশের একটি ঝোপে পলিথিনে মোড়িয়ে কে বা কারা ফেলে যায়। ২৪ এপ্রিল ভোরে, স্থানীয় কয়েকজন ও বনবিভাগ সেই পলিথিনে মোড়ানো শিশুটিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান ৷ খবর পেয়ে শিশুটিকে দেখতে ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। শিশুটির জন্য প্রয়োজনীয় নানা উপকরণ দিয়ে সাহায্যও করেন তারা ৷

স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেই শিশুটির নাম দেন ‘পরী’ ৷ উদ্ধার হওয়ার রাতেই পরীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে পাঠানো হয় মৌলভীবাজারে। সেখানে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে শুরু হয় পরীর চিকিৎসা। পরীর সুস্থতার জন্য সেদিন পুরো শহর প্রার্থনা করেছিলো।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতকটি এখন মৌলভীবাজার সদর হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৷

রোববার (১৯ মে) মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের স্ক্যানু (নবজাতকের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র) ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সেই শিশুটি চাইল্ড বেসিনে (নবজাতকের থাকার বিশেষায়িত স্থান) শুয়ে আছে ৷ কেউ কাছে গেলেই দেখে হাসছে ৷ পরীর সময় কাটছে এখন সেই বেসিনে শুয়ে ও হাসপাতালের নার্সদের কোলে চড়ে ঘুরে বেড়িয়ে ৷ ডাক্তাররা তাকে দিনের মধ্যে কয়েকবার দেখে যাচ্ছেন ৷ সে বেশ ভালো অবস্থায়ই আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ৷

স্ক্যানু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স রীতা রাণী দাশ সিলেটটুডে কে জানান,পরী এখন বেশ সুস্থ। প্রথমদিকের চেয়ে তার অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে ৷ তাকে ফর্মুলা ফীড দেয়া হচ্ছে এবং আস্তে আস্তে তার ওজন বাড়ছে ৷ ফেলে দেয়ার সময় পরী মাথায় যে আঘাত পেয়েছিলো তা এখন মোটামুটি সেরে গেছে ৷

এদিকে পরী উদ্ধার হওয়ার পর তাকে দত্তক নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, সংবাদকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন আসতে থাকে ৷ তবে পরীর দত্তকের বিষয়টি আদালত কতৃক নির্ধারিত হবে বলে সিলেটটুডে কে জানিয়েছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) সার্কেল আশরাফুজ্জামান ৷

তিনি জানান,পরী কে দত্তক নিতে চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে আবেদন করতে হবে ৷ তারপর আদালত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন ৷

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এস কে দাশ সুমন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাটিকে একটি মায়ের কোলে দেয়া হোক ৷ বাচ্চাটির এখন মাতৃস্নেহ খুব প্রয়োজন। আশা করি আদালত ও প্রশাসন এ ব্যাপারে আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে ৷

এদিকে পরীকে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করার পর তার মা বাবার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিলো না ৷ কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় পরীর বায়োলজিক্যাল বাবা কে গত ২৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় ৷ পরীর বায়োলজিক্যাল মায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷ বর্তমানে ওই মামলায় পরীর বায়োলজিক্যাল বাবা অরুন কুমার কর জেল হাজতে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পরীর মা কে ধর্ষন ও নবজাতককে গুম ও হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে ৷

আপনার মন্তব্য

আলোচিত