জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

২২ মে, ২০১৯ ০২:১৭

উদ্বোধনের আগেই সেতুতে ফাটল

জৈন্তাপুরে চিকারখাল সেতু

সিলেটের জৈন্তাপুরে চিকারখাল সেতুতে উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ২কোটি ৩৭লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই সেতু নির্মাণ করা হয়।

জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর ঢুলটিরপাড় ২নং লক্ষ্মীপুর বাজার জিসি সড়কের ১৪৪০মিটার চেইনেজ চিকারখালের উপর ৫৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজে অনিয়ম হওয়ার কারণে সেতু উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুর সিলেট বাস্তবায়নে ২কোটি ৩৭লক্ষ টাকা ব্যয়ে আইআরআইডিপি-২ প্রকল্পের আওতায় জৈন্তাপুর উপজেলার মুক্তাপুর ঢুলটিরপাড় ২নং লক্ষ্মীপুর বাজার জিসি সড়কের ১৪৪০মিটার চেইনেজ চিকারখালের উপর ৫৪.০০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর। কিছু দিনের মধ্যে ব্রিজটি জনসাধারণ চলাচলের জন্য উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের আগে বৃষ্টির পানিতে ব্রিজটির গার্ড ওয়াল ভেসে যায় এবং মূল ব্রিজের কয়েকটি পাইলিং পিলারের ফাটল বের হয়ে আসে।

জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরির লক্ষ্যে খারুবিল টু জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ও জৈন্তাপুর বাজার সড়কের চিকার খাল নদীর উপর নব-নির্মিত চিকারখাল সেতু চালুর আগেই পাইল (পিলার) ফাটল দেখা দিয়েছে। কাদা মিশ্রিত নিম্ন মানের বালু-পাথরের সাথে সিমেন্ট সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার আগেই পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেতুটি নির্মাণের নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে এবং দরপত্রে বর্ণিত নির্দেশনা মানা হয়নি। সেতুটি নির্মাণের সময় ঢালাই ও অন্যান্য কাজে এলাকার লোকজন দরপত্রে বর্ণিত গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত রড না দিয়ে কম দামি, পুরাতন ও টুকরা টুকরা রড এবং নিম্নমানের খোয়া-পাথর, বালু ব্যবহারসহ রাতের আঁধারে সেতুর ঢালাই কাজ করতে দেখেছেন। এ ছাড়া সেতুর বাইরের অংশে সিমেন্টের ঢালাই না করেই রঙ দিয়ে অনেক ফাটল ঢেকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এখনই সেতুর খুঁটির একাংশে দেখা দিয়েছে ফাটল এবং অনেক অংশ খসে পড়তে শুরু করেছে।স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুর সিলেট দুর্নীতির করনে আবারও ব্রিজটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরজমিনে পরিদর্শন কালে উপস্থিত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ঢালাই কাজের পূর্বে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি থাকার কথা থাকলেও কাজ করার সময় কোন ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতি তারা দেখতে পাননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের মর্জিমত ব্রিজের পাইলিং ৮০ফিট এর স্থলে কোন কোন পিলারে ৩৫-৪০ ফুট গভীররে পাইলিং করে ঢালাই এর কাজ সম্পন্ন করে। ঢালাই কাজে কাদা মিশ্রিত বালু, নিম্ন মানের পাথর ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “নূরুল হক এন্ড তৈয়বুর রহমান জেবি” মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) জৈন্তাপুর নির্দেশনা মোতাবেক পুরো কাজ হয়েছে। পাইলিং কাজের সময় পশ্চিমপার্শ্বে কয়েকটি পিলার ৩৫হতে ৪০ফিটের মধ্যে ঢালাই কাজ করা হয়েছে। পাইলিং যা গভীরে গিয়েছে ততটুকুর বিল আমাকে দেওয়া হবে। পূর্ব পাশের মেইন ব্রিজের পাইলিং এর উপর মূল ব্রিজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ক্যাপ স্থাপনের স্থানে ফাটলের বিষয়টি শুনেছি। নদীতে পানি থাকায় আমি ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি। এছাড়া ব্রিজের অন্যান্য কাজ যথা নিয়মে হয়েছে।

এবিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী তানভীর আহমদ বলেন, সঠিক নিয়মে কাজ হয়েছে। এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। পানির স্রোত বেশি হওয়ায় গার্ডার ভেঙ্গে যায় এটি ব্রিজের কোনরূপ ক্ষতি হবে না। এছাড়া পাইলিং পিলার ফাটলের বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলেন।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, প্রতিটি পাইলিং কাজ ৮০ফুট সম্পন্ন করে ঢালাই কাজ করা হয়েছে। ক্যাপে ফাটলের বিষয় তার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এটি প্লাষ্টারিং করলে সমাধান হয়ে যাবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত