সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

০২ জুন, ২০১৯ ১৮:১৭

চার ভাইসহ ছাতক পৌর চেয়ারম্যানের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল

নৌপথে টোল আদায় নিয়ে ছাতক পৌর মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম চৌধুরী ও তার ভাই শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় তাদের পাঁচ ভাইয়ের নামে থাকা ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

রোববার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল আহাদ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় পুলিশের ওপর হামলা, হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা রয়েছে। তাই জননিরাপত্তার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালায় (২০১৬-এর ২৫ ধারার নীতিমালার ১৯-এর (চ) ধারা মোতাবেক) তাদের ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

আদেশের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড গাজীপুর সেনানিবাসসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে শনিবার পাঁচ ভাইয়ের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আদেশ জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে

ছাতক বাগবাড়ির মৃত আলহাজ আরজ মিয়া চৌধুরীর ছেলে শাহীন আহমদ চৌধুরীর একটি ডিবিবিএল বন্দুক, জামাল আহমদ চৌধুরীর পর্তুগালের তৈরি একটি এসবিবিএল বন্দুক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী এক্সট্রা ব্যারেলে একটি শটগান, কামাল চৌধুরীর তুর্কির তৈরি এক্সট্রা ব্যারেলে একটি শটগান, তাদের অপর সহোদর আহমদ সাখাওয়াত চৌধুরী সেলিমের তুর্কির তৈরি এক্সট্রা ব্যারেলের একটি শটগান।

যে কারণে লাইসন্স বাতিল করা হয়েছে

গত ১৪ মে মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকের সুরমা নদীর নৌপথে টোল আদায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও তার ভাই জেলা আওয়ামী লীগ তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়। এতে নিরীহ ভ্যানচালক সাহাবউদ্দিন (৪৫) নিহত হন। তিনি পৌর শহরের আবদুস ছোবহানের ছেলে।

এ ছাড়া ওই ঘটনায় ছাতকের ওসি, দুই এসআই, চার পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ।

সংঘর্ষে দুপক্ষই প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। এ ঘটনায় ছাতক থানায় পুলিশ এসল্ট, হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ছাতকের সুরমা নদীতে বালু, পাথর ও সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্কহেড নৌকা থেকে চাঁদা সংগ্রহে সম্প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়র নিয়ন্ত্রিত ৯ কাউন্সিলর জোট বেঁধে ‘শাহজালাল সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন।

এই সংগঠনের ব্যানারে পৌর শহরঘেঁষে বয়ে চলা সুরমা নদীতে বালু, পাথর, সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্কহেড নৌকা থেকে টোল আদায়ের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হতো।

এ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির জের ধরে ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা কালাম চৌধুরী ও তার কাউন্সিলদের সঙ্গে তারই প্রতিপক্ষ সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীর গ্রুপের মধ্যে বিরোধের জের ধরে ওই রাতে বন্ধুকযুদ্ধে জড়ায় দুই পক্ষ। সুরমায় নৌযান থেকে অতিরিক্ত হারে চাঁদা আদায় করা নিয়ে দুপক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়।

এদিকে সংঘর্ষের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার রাতেই পৌর মেয়র শামীম চৌধুরীর ভাই জামাল চৌধুরী, চাচা এলাইস চৌধুরীসহ কমপক্ষে ২৮ জনকে আটক করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলা কারাগারে পাঠায়।

এ ব্যাপারে ছাতক থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও আমিসহ ওই রাতে পুলিশের সাত সদস্য আহত হই। পরে আমার একটি পা থেকে অপারেশনের মাধ্যমে গুলি বের করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত