তপন কুমার দাস, বড়লেখা

১০ জুন, ২০১৯ ০০:২৪

ঐতিহ্যের মোরগ লড়াই

গ্রামীণ অনেক খেলাই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে। অনেককিছু হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবু মানুষ জীবনের আনন্দ খুঁজতে এখনো অনেক খেলা বাঁচিয়ে রাখছে। মোরগ লড়াই তার একটি।

গত শনিবার (৮ জুন) দিনব্যাপী গ্রামীণ ঐতিহ্যের মোরগ লড়াই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বৃহত্তর ঘোলসা এলাকার যুবসমাজ ও শৌখিন মানুষের উদ্যোগে এই লড়াই আয়োজন করা হয়েছিল।

ওই ইউনিয়নের ঘোলসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মত এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এর সফল সমাপ্তিতে খুশি আয়োজকরা।

মোরগ লড়াই উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। সকাল সাড়ে ১০টায় খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক আগে থেকেই উৎসবস্থলে মানুষের সমাগম হতে থাকে। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মাঠ ভরে যায়। মোরগের লড়াইয়ের আয়োজন হলেও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের বাইরে বসেছিল অস্থায়ী বিভিন্ন জিনিসপত্র ও খেলনার দোকান। এই সুযোগে ছোটরাও কেনাকাট করে খেলনা সামগ্রী। বড়লেখা উপজেলা ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে শৌখিন মানুষ প্রতিযোগিতাস্থলে মোরগ নিয়ে হাজির হন। প্রতিযোগিতায় প্রায় ২৫টি দলে অর্ধশতাধিক মোরগ দিনভর জমজমাট লড়াইয়ে মেতে ওঠে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। লড়াই শেষে আকর্ষণীয় পুরস্কার মুঠোফোন জিতে নেন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মোরগ মালিক জামাল উদ্দিন।

আয়োজকদের একজন সাইফুল ইসলাম জিবু বলেন, ‘ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার কারণে বিভিন্ন এলাকায় আমার যাওয়া হয়। ওইসব এলাকায় বড় ধরনের পুরস্কার দিয়ে এই খেলার আয়োজন করা হয়। বড়লেখায় এটা প্রচলিত ছিল না। নতুন কিছু আয়োজনের চিন্তা ছিল। এই চিন্তা থেকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যতিক্রমী আয়োজনের করি। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ আয়োজন। এলাকার মানুষের বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। তেমন প্রচারণা করা হয়নি। তারপরও সফল হয়েছি আমরা। হাজারো মানুষের সমাগম হয়েছে। প্রতিযোগিতায় প্রতি জোড়ায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ভালো খেলায় একজনকে আকর্ষণীয় পুরস্কার মুঠোফোন দেওয়া হয়েছে।’

অন্যদিকে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ শেষে এলাকার সমাজসেবক সৈয়দ কামরুজ্জামান ও বৃক্ষবন্ধু নার্সারির পক্ষ থেকে ঘোলসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ফলদ বৃক্ষের ১৭টি চারা প্রদান করা হয়।

বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাজী রহমত আলী। সাইফুল ইসলাম জিবুর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন। অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন ইউপি সদস্য রফিকুল আলম, সারথী পুরকায়স্থ, প্রতিযোগিতা পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মুক্তিযোদ্ধ আছাব উদ্দিন, এলাকার সমাজসেবক সামছুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুর্শেদুজ্জামান সাদেক, সাবেক ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম, প্রতিযোগিতা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বনু ও সহসভাপতি আব্দুল খালিক প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত