নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুন, ২০১৯ ০১:১০

‘ক্ষোভ’ থেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী দুদুকে হত্যা!

বুধবার রাতে সিলেট নগরীর বন কলাপাড়া এলাকায় খুন হন স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী দুদু মিয়া (৩৫)। স্থানীয় অনেকের দাবি, ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন দুদু। আর পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে দুদুকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, দুদুর নানা অপরাধ কর্মকান্ডে অতীষ্ট হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয়রা। এই ক্ষোভ থেকেই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

পুলিশ ও স্থানীয় অনেকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বন কলাপাড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন দুদু। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও স্থানীয় কাউন্সিলের নাম ভাঙ্গিয়ে একের পর এক অপরাধ সংগঠিত করতেন তিনি। গত ১৫ এপ্রিল বন কলাপাড়া এলাকায় সংঘটিত একটি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী তিনি। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়কেটি ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। দুটি চাঁদাবাজি মামলাও রয়েছে দুদুর বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারধরসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হতো দুদুর মাধ্যমে।

দীর্ঘদিন ধরে এসব অপরাধের কারণে অতীষ্ট হয়েই ক্ষুব্দ এলাকাবাসী দুদুকে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেনের। তিনি বলেন, দুদু এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায় করতো। তার বিরুদ্ধে দুটি চাঁদাবাজি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি ধর্ষণ মামলায় জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার চাঁদাবাজি শুরু করে। বুধবার রাতেও বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা তুলছিলো। এতে ক্ষুব্দ হয়ে লোকজন জড়ো হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন আছে। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান ওসি।

তবে দুদুর পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে দুদু মিয়াকে হত্যা করে। দুদু মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী বলে দাবি পরিবারের।

নিহত দুদুু মিয়ার ভাই হাসিম খানের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে খুন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওসমানী হাসপাতালের মর্গের সামনে হাসিম খান বলেন- বুধবার রাত পৌণে ১১টার দিকে সাদিয়া টেলিকম নামক দোকানে দুদু মিয়ার উপর হামলা চালায় ১০-১২ জন লোক। হাসিম বলেন, হামলায় যখন দুদু মিয়া মৃত্যুর মুখে তখন তারা তাকে টেনে দোকান থেকে গোলপ মিয়া পয়েন্টে নিয়ে যায় এবং মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় সাদিয়া টেলিকমে ডাকাত পড়েছে। ডাকাতের খবর শুনে এলাকাবাসী বের হয়ে দেখেন দুদু মিয়াকে মেরে ফেলে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, হামলার পূর্বে তার আরেক ভাই জুয়েল খান দোকানে ছিল। হামলার সময় সে দৌড়ে পালিয়ে জীবন বাঁচায়। সে হামলাকারীদের মধ্যে ৪ জনকে চিনতে পেরেছে বলে জানান তিনি।

দুদু মিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হওয়ায় ছাত্রদল ও জামায়াতের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে দাবি তার।

একই ধরণের অভিযোগ সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবকল লীগের সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর আফতাব আহমদেরও। তিনি বলেন, দুদুকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেওয়ার আগেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।

বন কলাপাড়া এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে এলাকায় ডাকাত পড়েছে বলে বন কলাপাড়া এলাকার শাহ রুমি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণা শুনে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে স্থানীয় গোলাপ পয়েন্টে দুদুকে পিটিয়ে হত্যা করেন। দুদু স্থানীয় একটি টেলিকমের দোকানে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার সড়কের মধ্যে দুদুর লাশ পড়ে আছে। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন। লাশের হাতে একটি দা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত