শাকিলা ববি

২৩ জুন, ২০১৯ ০০:২৬

সিলেট-ঢাকা রুটে বাস চলাচল প্রায় বন্ধ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতু ভাঙার কারণে এই সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে ঢাকা-সিলেট সড়কের যানবাহনদের। বিকল্প সড়ক দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে শুক্রবার রাত ১০টায় সিলেট থেকে রওয়ানা দিয়েছিলো শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। শনিবার বিকাল চারটায় ওই বাসটি ভৈরব এলাকার কাছাকাছি পৌছে। বিকল্প সড়কটি সরু হওয়ায় যানজট পড়ে র্দীঘ ১৮ ঘন্টায় বাসের যাত্রীদের ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই শনিবার থেকে শ্যামলী পরিবহনের সেবা বন্ধ রাখা হযেছে বলে জানান বলে জানান শ্যামলি পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার টিপু দাস।

শ্যামলী পরিবহনের মত সিলেট থেকে সারা দেশে বাস যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে গ্রীন লাইন পরিবহন, লন্ডন এক্সপ্রেস, ইউনিক সার্ভিস, এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, হানিফ পরিবহনসহ বেশিরভাগ দূরপাল্লার বাস।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে শাহবাজপুর সেতুর চতুর্থ স্প্যানের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ায় গত ১৯ জুন ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়  সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)। পাশাপশি সড়ক ও জনপদ বিভাগের পক্ষ থেকে বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়।

এই বিকল্প সড়কটিও বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। চারদিন যাবত ভারী যানবাহন চলাচল করায় ইতোমধ্যে এই বিকল্প সড়কে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হয়ে গেছে। তাছাড়া এই সড়কটি আকারে সরু হওয়ায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট থাকে। যার ফলে বাস সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে সিলেটের থেকে সারাদেশের সাথে বাস যোগাযোগ বন্ধ রাখায় দূর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে বিদেশগামী যাত্রী, অসুস্থ যাত্রী, চাকুরীজীবী ও পর্যটকরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। প্রতিদিনই যাত্রীরা কাউন্টারে এসে ভিড় করছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, বাস সার্ভিস বন্ধ থাকলেও কদমতলী বাস টার্মিনালে প্রচন্ড ভিড়। দরগা গেইট এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারেও যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভিড় বেড়েছে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে। শনিবার সকাল থেকেই টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন চোখে পরে। ট্রেনের টিকিট না পেলেও প্লাটর্ফমেই সময় কাটান যাত্রীরা।

গ্রীন লাইন পরিবহনের দরগা গেইটস্থ কাউন্টারে ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকেট নিতে আসনে মুহাইমিন রহমান। তিনি বলেন, মাকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকা যাবো কিন্তু কোনো বাসের টিকেট পাচ্ছি না। সব বাস বন্ধ। আর ট্রেনের টিকেটতো সোনার হরিণের মত। শুনেছি ৩৫০ টাকার টিকেট ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

১৯ তারিখ ট্রেনে করে বন্ধুদের নিয়ে সিলেটে বেড়াতে এসেছিলেন সোয়েব। বাস বন্ধ থাকার কারণে যেতে পারছেন না ঢাকায়। তিনি বলেন, আমরা ৫ বন্ধু এসেছিলাম ঘুরতে। আজ ঢাকা যাওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু সব বাস বন্ধ। স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের টিকেটও পাই নাই। বুঝতেছি না কি করবো। কারণ আমরা কলেজ ছাত্র। লিমিটেড খরচ নিয়ে এসেছি। এখন সিলেটে থাকতে গেলে কিছুটা বিপাকে পড়তে হবে।    
 
শনিবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে শ্যামলী পরিবহনের বাস। গত তিন দিন যাবত বন্ধ রাখা হয়েছে ইউনিক সার্ভিসের বাস, ১৯ তারিখ রাত ১১টার পর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে লন্ডন এক্সেপ্রেস ও এনা ট্রান্সপোর্টের বাস, ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে গ্রীন লাইন পরিবহনের বাস। ব্রীজ মেরামত হওয়ার পর অথবা বেইলি ব্রীজ বা ফেরির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বাস সার্ভিস বন্ধ রাখা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা

এদিকে বাস সার্ভিস বন্ধ রাখার কারণে কোম্পনীগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান কাউন্টারে দায়িত্বরতরা। ঢাকা-সিলেট রুটের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেতু ভাঙার পর দায়িত্বশীলদের উদসীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

গ্রীন লাইন পরিবহনের সেলস অফিসার মো. মহিউদ্দিন বাবু বলেন, যে বিকল্প সড়কে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে সেটা ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী না। তাই এই বিকল্প সড়কে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার যানজট থাকে। বাস বন্ধ রাখার জন্য কোস্পানীর প্রতিদিন প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আর যাত্রীদের দূর্ভোগতো চরমে। বাস বন্ধ করার পর থেকে প্রতিদিন যাত্রীরা টিকেটের জন্য আসেন। অনেকে রোগী নিয়ে আসেন। তখন খুব খারাপ লাগে। আমরাতো কাউন্টার বন্ধ করে দিতাম। কিন্তু যাত্রীদের কথা চিন্তা করে শুধুমাত্র ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য কাউন্টার খুলে রাখছি।

এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মাজার গেইট কাউন্টারের কাউন্টার মাস্টার দিপু বলেন, ব্রিজ ভাঙার দিন থেকেই আমাদের এই রুটের বাসগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্রিজ ঠিক হওয়ার পরই আবার সার্ভিস শুরু হবে।

ইউনিক সার্ভিসের কাউন্টার মাস্টার মাহবুব রহমান বলেন, এভাবে বাস সার্ভিস বন্ধ রাখার জন্য যাত্রীদের যেমন দূর্ভোগ হচ্ছে। তেমনি আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। আর যে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে সেটা ব্যবহারের উপযোগী না। এখন ব্রিজ ঠিক হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অথবা সংশ্লিষ্টদের বিকল্প পথ বের করে দিতে হবে। যেমন ওই সেতুর পাশে বেইলি ব্রীজ অথবা ফেরীর ব্যবস্থা করতে হবে।

লন্ডন এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার শাকির বলেন, ব্রিজ ভাঙার কারণে চারদিন যাবত আমারে বাস সার্ভিস বন্ধ। বিকল্প সড়ক ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু ওই সড়কের যে অবস্থা সেটা দিয়ে আমাদের পরিবহনের মত ভারী গাড়ি চলাচল সম্ভব না। বাস বন্ধ রাখার কারণে কোম্পানির ক্ষতি হচ্ছে। স্টাফরাও ক্ষতির সমুক্ষিন হচ্ছে। আর যাত্রীরাতো চরম ভোগান্তীর মধ্যে আছেন।

এদিকে, সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সেতু মেরামত করতে আরও ১০ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত