নবীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৫ জুন, ২০১৯ ২২:৪০

ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়ে খুশি নবীগঞ্জের কৃষকরা

নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের কৃষক হাবিবুর রহমান এ বছর ৩ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছেন। ধান ভালো হওয়ায় ৩ বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৯০ মণ ধান। বাজারে ধানের দাম মণ প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান সরকার ক্রয় করবে এমন ঘোষণায় আনন্দিত হন তিনি।

পর্যায়ক্রমে খাদ্য গুদামের নিয়ম অনুযায়ী ধান শুকিয়ে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪০ টাকা দরে ৩ টন ধান বিক্রি করতে পেরে বেশ খুশি। ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে না পারলে অনেক লোকসান গুনতে হতো তাকে।

সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে নবীগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে যান কৃষক খালেদ মিয়া, কৃষক খুর্শেদ মিয়া, আরিফ উল্লাহ, আব্দুল হাদী, হারুন মিয়া, মুকিদ মিয়া, রেজা আহমেদ, খালেদ মোশারফসহ বেশ কয়েকজন কৃষক।

এ সময় তারা এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের কাছে বাজারের ছেয়ে দ্বিগুন দামে ধান বিক্রি করতে পেরে তারাও খুশি। তারা বলেন, আমরা এক হাতে বিক্রি করেছি, আরেক হাতে চেক পেয়েছি। কোন ধরনের ভোগান্তি হয়নি। ধান বিক্রির টাকা পেয়ে তাদের অনেক উপকার হয়েছে।

খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি বা ১ হাজার ৪০ টাকা মন দরে নবীগঞ্জ উপজেলায় ৫৩৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর কৃষকদের তালিকার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে উপ-সহকারী নিযুক্ত করেন।

উপ-সহকারীরা স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সহযোগিতায় কৃষকদের তালিকা তৈরি করেন। ১৯ মে নবীগঞ্জে সরকারি পর্যায়ে ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন। উপজেলা খাদ্য গুদামে এ ক্রয় অভিযানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন-হাসান।

পরে ২৮ মে কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী। সরাসরি গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ধান ক্রয় করেন।

এরপর থেকেই তালিকাভুক্ত কৃষকরা ধানের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে ধান শুকিয়ে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ ধরে বিক্রি করেন। ইতিমধ্যে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২০০ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়।
 
কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, বাজারে প্রতি মণ ধান সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রির কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খাদ্য গুদামে গিয়ে সরকারিভাবে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান বিক্রি করেছেন। এতে তিনি খুবই খুশি। এই দামে ধান কিনলে কৃষকেরা লাভবান হবেন এবং কৃষকদেরও দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করেন তিনি।

কৃষক আব্দুল মুকিদ বলেন, আমি ৫৮ মন ধান সরকারিভাবে বিক্রি করতে পেরে লোকসানের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছি। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ধান বিক্রি করেছি। সরকার যদি প্রতি বছর এভাবে সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করে তাহলে কৃষকরা এগিয়ে যাবে।

কৃষক আহমেদ রেজা বলেন, এ বছর ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কিন্তু মাত্র ৩ টন ধান বিক্রি করতে পারছি। গেল বছরের ধান ঘরে রয়ে গেছে। তবে বেশি ধান বিক্রি করতে পারলে ভালো হতো।

কৃষক হারুন মিয়া বলেন, ২৬ টাকা দরে ধান বিক্রি করতে পেরে আমরা খুশি, সরকার আমাদের মতো ধান চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করলে আমাদের মতো কৃষকের উপকার হবে এবং লোকসান দিতে হবে না। আমি এক হাতে ধান বিক্রি করে আরেক হাতে চেক পেয়েছি।

নবীগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, কৃষি অফিস থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছি। ৫৩৮ মেট্রিক টনের মধ্যে ইতিমধ্যে ১ জন কৃষকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৩ টন করে মোট ২১৯ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করেছি। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ৫৩৮ মেট্রিক টন ক্রয় করতে পারবেন বলেও মনে করেন তিনি।

হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। এই সরকার কৃষিখাতকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে এতে ভর্তুকি দিচ্ছেন। তাই কৃষি এবং কৃষকবান্ধব এই সরকার চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষকের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত