জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

২৬ জুন, ২০১৯ ০২:২৯

গোলাপগঞ্জে রাতের আঁধারে চলছে টিলা কাটা

সিলেটের গোলাপগঞ্জে রাতের আঁধারে টিলা কাটছে ভূমিদস্যুরা। সরকারিভাবে টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের তোয়াক্কা করছেন না ওই ভূমিদস্যুরা।

জানা যায়, উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, আমুড়া, লক্ষণাবন্দ, লক্ষীপাশা, বাঘা ইউনিয়নের টিলা ঘেরা এলাকায় তুলনামূলক জনবসতি কম। এসব এলাকাবাসী রাতে ঘুমিয়ে পড়লে ভূমিদস্যুরা ট্রাক, টলি, এক্সকেভেটর দিয়ে টিলা কাটা শুরু করে। ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে এ টিলাকাটার মহোৎসব। প্রথম প্রথম কিছুটা রাখডাক থাকলেও এখন বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিলা কাটা চক্রগুলো শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদও জানায় না। উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় জেল জরিমানা করে থামাতে পারছে না এ টিলাখেকোদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের রায়গড়, বারকোট, দত্তরাইল এলাকায়ও রাতে আধারে চলছে টিলা কাটা। তবে সবচেয়ে বেশি টিলা কাটার ঘটনার ঘটছে আমুড়া ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের ধারাবহর, শীলঘাট, আমনিসহ প্রায় সব এলাকায় চলছে টিলা কাটার মহোৎসব। বাঘা ইউনিয়নের সোনাপুর অধিরের দোকান সংলগ্ন গন্ডামারার ছত্তার মিয়ার টিলা ও আলাউদ্দিনের টিলা, মুক্তিযোদ্ধা গেইট সংলগ্ন একটি টিলা, সোনাপুর, গোলাপনগর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় টিলা কাটা চলছে।

সরেজমিন ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের বারকোট উছপাড়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে সাবুল আহমদের নেতৃত্বে লিলন মিয়ার টিলা কাটা হচ্ছে। এই টিলা থেকে ট্রাক দিয়ে বালু নিয়ে একই গ্রামের শাহিদ আহমদ নামক এক লন্ডন প্রবাসীর জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এই ভরাট কাজে ট্রাক ড্রাইভার মালেকও জড়িত আছেন বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে সাবুল আহমদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের জায়গা ভরাট করতে ট্রাক চালক মালেক আহমদের সাথে কন্টাক্ট করেছি। উনি কোথা থেকে মাটি আনছেন আমি জানি না। টিলা কাটা নিষিদ্ধ জেনেও কেন টিলার লাল মাটি দিয়ে জায়গা ভরাট করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর টিলার মাটি দিয়ে জায়গা ভরাট করবো না।

ট্রাকের ড্চালক মালেক আহমদ জানান, বারকোটের উছপাড়ার লিলন মিয়ার টিলা থেকে সাবুল আহমদের মাধ্যমে শাহিদ আহমদের জায়গা ভরাট করছেন তিনি। এর জন্য শাহিদ আহমদ প্রতি গাড়ির মাটির সাড়ে ১২শ টাকা তাদের দেন। এই টাকা থেকে টিলার মালিককেও দিতে হয় বলে জানান তিনি।

টিলার মালিক লিলন আহমদ টিলার কাটার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বলেন, অনেক দিন আগে একটি ঈদগাহর জন্য আমার টিলা থেকে মাটি কাটা হয়েছিল। এখন মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) সুমন্ত ব্যানার্জী বলেন, টিলাকাটা রোধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন যখনই যেখানে টিলা কাটার সংবাদ পাচ্ছে, অভিযান পরিচালনা করছে। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। এ চক্রকেও রোধ করতে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান বলেন, ওই কাজে জড়িত এমন কিছু লোককে সম্প্রতি জেল জরিমানা করা হয়েছে। প্রকৃতির সৌন্দর্য় বিনষ্টকারী টিলা কাটার কাজে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না। এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত