সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২৬ জুন, ২০১৯ ১৬:৪১

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চলাচলে ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি’

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চলাচলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রী, সাধারণ মানুষজনসহ বিআরটিসি সংশ্লিষ্টরা।

এই অভিযোগের মধ্যেই মঙ্গলবার বিআরটিসি বাসের জানালা ইচ্ছে করেই ভেঙে দিয়েছেন সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের গাড়ির ড্রাইভার।

ওই দিন দুপুরে বিআরটিসির এসি বাস যাত্রী নিয়ে সুনামগঞ্জ আসার পথে গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় আক্রোশান্বিত হয়ে বেপরোয়া ওই চালক বাসটির জানালার কাঁচ ভেঙে দেন। এ সময় ভেতরে থাকা যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে পরিবহন শ্রমিকরা অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন।

জানা যায়, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চালুর প্রতিবাদে ৩ জুন এক দফা পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছিল পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। একই দাবিতে ২৪ জুন দ্বিতীয় দফা সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলে সিলেট বিভাগজুড়ে সাধারণ মানুষ আন্দোলনে নামেন।

বিআরটিসি বাস চালু রাখার দাবি ও এই সড়কে বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবিতে সিলেট-সুনামগঞ্জে গণঅনাস্থা কর্মসূচি, স্মারকলিপি, মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। ২১ জুন রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠকে গণক্ষোভের মুখে পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত করে মালিক-শ্রমিকরা।

তবে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির ৮টি বাস চলাচলে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ শুরু থেকেই করছেন সাধারণ যাত্রী ও বিআরটিসি সংশ্লিষ্টরা। রাস্তায় বিআরটিসি বাসকে পাস না দেয়া, বিআরটিসি ড্রাইভার-হেল্পারকে গালাগালিসহ নানাভাবেই যাত্রীদের বিআরটিসি সেবা না নিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই যাত্রীদের সেবা দিচ্ছে বিআরটিসি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে যাত্রী নিয়ে আসছিল বিআরটিসির এসি বাস। এ সময় সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলামের মালিকানাধীন একটি বাসের চালক আরিফ মিয়া উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে বিআরটিসি বাসের জানালায় তার বাস দিতে আঘাত করেন। গাড়ির সজোর ধাক্কায় বিআরটিসি বাসের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। এ সময় বিআরটিসি বাসের যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন জহিরুল ইসলামের ড্রাইভার ও সহকারী।

হেলেনা বেগম নামের বিআরটিসি বাসের এক যাত্রী বলেন, হঠাৎ করে একটি গাড়ি আমাদের গাড়ির পেছনের দিকটায় আঘাত করে। আমরা ভয় পেয়ে যাই। গাড়ির জানালাও ভেঙে পড়ে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে ওই গাড়ির ড্রাইভার ও হেল্পার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

তিনি বলেন, ইচ্ছে করেই গাড়ির চালক বিআরটিসির গাড়িতে আঘাত করেছে।

বিআরটিসির সুনামগঞ্জ কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, গাড়ির ড্রাইভার ইচ্ছে করেই আমাদের গাড়িকে আঘাত করেছে। এতে আমাদের নতুন এসি গাড়ির জানালা ভেঙে গেছে। গাড়ির যাত্রীরাও এ ঘটনায় আতঙ্কিত ছিলেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। কারণ এরা রাতের আঁধারে আরো কোন বড় ক্ষতি করতে পারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিবহনের।

সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আরিফ নামের আমার এক ড্রাইভার আছে। তবে সে বিআরটিসি বাসের জানালা ভেঙেছে কি না তা জানা নেই।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চালু করেছে। সরকারি মালিকানাধীন গাড়িকে সরকারি রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা করা অনৈতিক। বিআরটিসির সংশ্লিষ্টরা আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাদেরকে আইনিভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত