শাকিলা ববি

২৭ জুন, ২০১৯ ০০:৩৩

অবাধ যান চলাচল: সিলেট ইকোপার্কে ৮ মাসে ময়ূর-অজগরসহ ১৯ প্রাণীর মৃত্যু

অবাধে যান চলাচলের কারণে শব্দ ও বায়ু দূষণে মারা যাচ্ছে সিলেট বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রাণী। একই সমস্যায় প্রাণীদের প্রজননও হচ্ছে না এখানে। টিলাগড় ইকোপার্কে বন্যপ্রানী সংরক্ষণ কেন্দ্র চালুর পর গত ৮ মাসে এখানকার ১৯টি প্রাণী মারা গেছে। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে মারা যায় একটি ময়ূর।

এরআগে আরও দুটি ময়ূর মারা যায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের। গত মাসেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় একটি চুকার প্যাকটিস পাখি। চালুর পর থেকে এভাবে নিয়মিত প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে এখানে।
 
গত বছরের ২ নভেম্বর সিলেট নগরীর টিলাগড় ইকোপার্কে এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়। এরআগে এখানে নিয়ে আসা হয় ৯ প্রজাতির ৫৮টি প্রাণী। এরপর আরও কয়েকদাফে প্রাণী আনা হয় এখানে।

সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্রে দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বনের ভিতরে অবাদে গাড়ি প্রবেশের কারণেই মারা যাচ্ছে এখানকার প্রাণী। যানবাহানের অবাধ যাতায়াতে শব্দ ও বায়ু দূষণেই প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে।

জানা যায়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের ভেতর দিয়েই যাতায়াত করে আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষজন। রাতদিন গাড়ি নিয়ে বনের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করেন তারা। হর্ণ বাজানোতেও কোনো বিধিনিষেধ নেই। এমনকি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্রের ভেতরেই করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে এখানে আগত দর্শনার্থীরাও গাড়ি নিয়েই ভিতরে প্রবেশ করে। ফলে প্রায় ২৪ ঘন্টাই বনের ভেতর দিয়ে যান চলাচল করে। এতে চরম শব্দ ও বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে এখানকার প্রাণীগুলো।

সিলেট বণ্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্রের অস্থায়ী প্রাণীশালা রক্ষক মো. মাসুদ হাওলাদার বলেন, এখানকার প্রাণীদের রক্ষা করতে হলে সবার আগে বনের ভিতরের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। সব সময় গাড়ি চলাচল করে এখানে। যার ফলে প্রাণীরা ঘুমাতে পারে না।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্রে দায়িত্বরত সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই সংরক্ষ কেন্দ্রে ৫১টি প্রাণী আছে। গত ৮ মাসে ৩টি ময়ূর, ১টি অজগর সাপ, ৭টি লাভবার্ড, ২টি বাজিগর পাখি, চুকার পেকটিস পাখি ১টি, ২টি কালিম পাখি, থাইল্যান্ডের কৈকাপ মাছ ২টি, খরগোশ ১টি মারা গেছে। আর ৪টি হরিণের মধ্যে একটি হারিয়ে গেছে।

সংশ্লিস্টরা জানান, শব্দ ও বায়ু দূষণ ছাড়াও ছোট খাঁচায় আবদ্ধ থাকা এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে মারা যাচ্ছে এখানকার প্রাণী। এসব সমস্যার কারণে এই কেন্দ্রে প্রাণীদের প্রজননও হচ্ছে না।

সরজমিনে দেখা যায়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্রের সবগুলো খাঁচাই জোড়া তালি দিয়ে মেরামত করা। অপরিকল্পিত ভাবে খাঁচা তৈরি করার কারণে শুরুতে যে দুটি হরিণ আনা হয়েছিল সেগুলো খাঁচার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে একটি হরিণ পাওয়া যায়। এছাড়া বাঘ ও ভাল্লুক রাখার খাঁচা দুটি ওই সব প্রাণী রাখার উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন খোদ দায়িত্বরতরা।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হাসপাতালের ভেটেরিনারি পরামর্শক মঞ্জুর কাদের চৌধুরী বলেন, এটা ইকোপার্ক নাকি বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্র এটাই এখনো সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়নি। এটা যদি পার্ক হয় তবে দর্শনার্থীরা আসতে পারেন। কিন্তু এটি যদি বন্য প্রাণী সংরক্ষন কেন্দ্র হয় তবে এখনে এতো দর্শনার্থী আসার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, এই প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অবাধে গাড়ি চলাচল। সারাক্ষন এখানে গাড়ি চলাচল করে। শব্দ দূষণের কারণে প্রাণীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এই কেন্দ্রের ভিতর গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। আরেকটি সমস্য হচ্ছে সংকুচিত খাঁচার মধ্যে পাখি রাখা। এসব খাঁচা প্রাণীদের রাখার জন্য উপযুক্ত না।

মঞ্জুর কাদের চৌধুরী আরো বলেন, এখানে আসা প্রাণীদের প্রজনন হচ্ছে না। এটা একটা গুরুতর সমস্যা। শব্দ ও বায়ু দূষন, খাঁচায় জায়গা সংকটসহ বিভিন্ন কারণে প্রাণীদের প্রজনন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

বর্তমানে এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য তানহা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

তানহা এন্টার প্রাইজের পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয়দের বনের ভেতরের রাস্তা ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারসহ সকলের সহযোগিতা দরকার। রাত ১১টার পর গাড়ি প্রবেশ করতে নিষেধ দেওয়া আছে কিন্তু স্থানীয়দের প্রভাবে সেটাও করা যায় না। তাছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে এই পার্কটি করা হয়েছে। তাই প্রাণীদের ক্ষতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাড়ি চলাচল বন্ধ করা সম্ভব না হলেও সীমিত করার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত