কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১৫ জুলাই, ২০১৯ ১৮:৫২

কমলগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রোববার রাত ৩টায় নতুন করে ধলাই নদীর কমলগঞ্জের রামপাশায় আরও একটি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ধলাই নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে মোট ৪টি। এসব ভাঙ্গনে অন্তত ১১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৮শত পরিবার। বৃষ্টি হলে আরো কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ভাঙ্গনের আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।  
 
এদিকে ভারি বর্ষণে লাউয়াছড়া বনে পাহাড় ধসে গাছ পড়ে এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। ঢলের পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর-কুলাউড়া ও শমশেরনগর-তারাপাশা সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। ফলে এ সমতল সড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চাকুরীজীবীরা দুর্ভোগে পড়েন।

উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে কমলগঞ্জের ধলাই নদী ছাড়াও লাঘাটা ও ক্ষিরনী নদীর পানি বেড়ে গত তিন দিনে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যার ফলে পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। বন্যা কবলিত এসব এলাকার অনেক গ্রামে সরকারিভাবে এখনো অনেক ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি বলে জানা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত দুইটায় কমলগঞ্জ পৌরসভার রামপাশা এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে  ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। বিকেলে রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী এলাকায় পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়। রোববার বিকেলে আদমপুর ইউনিয়নের হকতিয়ারখোলা ও রহিমপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধে ২টি নতুন ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও উপজেলার নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ধলাই নদীর পানি বেড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধে নতুন ও পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে কমলগঞ্জের পৌরসভা, রহিমপুর, আদমপুর, পতনঊষার, মুন্সীবাজার ও শমশেরনগর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ১১৫ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে উজান থেকে আসা পাহাড়িঢলে কমলগঞ্জের ঘোড়ামারা, কেওয়ালীঘাট, রুপসপুর, রাধাগোবিন্দপুর, মহেশপুর, শ্রীরামপুর, দক্ষিণ ধুপাটিলা, পালিতকোনা, রসুলপুর, বনবিষ্ণুপুর, গোপীনগর, রশিদপুর, নোয়াগাঁও, চন্দ্রপুর, কোনাগাও, বনবিষ্ণুপুর, রায়নগর, রামপুর, রামচন্দ্রপুর, হরিশ্মরন, জালালপুর, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, কান্দিগাও, রামপাশা, কুমড়াকাপন, রামপুর, বিষ্ণুপুর. নারায়ণপুর, কান্দিগাঁও, গন্ডামা, হকতিয়ারখোলা, কেওয়ালীঘাট, জালালপুর, বন্দরগাঁও, সতিঝিরগাঁও, মারাজানের পার, রাধানগর, হরিপুর প্রভৃতি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। ভাঙছে গ্রামীণ সড়কও।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, সোমবার বিকেলে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য ইতিমধ্যে ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ইতিমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে সোমবার কমলগঞ্জ পৌর এলাকা ও রহিমপুরে বন্যাক্রান্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে।

কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ কমলগঞ্জ পৌর এলাকা ও রহিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল নিজ ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশেকুল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমলগঞ্জে ১২ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ইতিমধ্যে বেশকিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে।

এদিকে বন্যার খবর শুনে সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মামুনুর রশীদ,  কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত