নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:৩৯

জলমগ্ন উপশহরসহ নগরীর কয়েকটি এলাকা, স্কুল বন্ধ ঘোষণা

টানা বৃষ্টিতে প্রায় তিনদিন ধরে জলমগ্ন অবস্থায় আছে সিলেট নগরীর উপশহারসহ কয়েকটি নিচু এলাকা। সড়ক উপচে অনেকের বাসাভাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।

রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে উপশহর এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিদন দিনের জন্য শাহজালাল উপশহর হাই স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমাটির সভাপতি  সিসিকের ও ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে এ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

দুদিন ধরে পাঠদা্ন বন্ধ রয়েছে উপশহরের বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুলে।
   
বৃষ্টিতে উপশহরের অন্তত পাঁচটি ব্লকের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ওই এলাকার ভেতরের কলোনিগুলোর বাসিন্দারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন। কলোনীর ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। উপশহর এলাকার অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পানি উঠে গেছে নগরীর সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, তেরোরতন ও দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায়।

সিটি করপোরেশন বলছে, সুরমা নদীর পানি উপচে পড়ায় নগরীর পানি বেরোতে পারছে না। ফলে নিচু এলাকাগুলো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্কুল-মাদরাসাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হলেও এখনো বেশির ভাগ কেন্দ্র খালি। মীরাবাজার এলাকায় শাহজালাল জামেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মীরাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

শাহজালাল উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ স্থানেই পানিবন্দি হয়ে আছে মানুষ। বিশেষ করে সি-ব্লকের পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত। এখানে কোথাও হাঁটুপানিতে ডুবে আছে সড়ক। একই দশা বি ও জি ব্লকের। আই ব্লকে রাস্তার পাশাপাশি খেলার মাঠও পানিতে তলিয়ে গেছে।  এ-ব্লকের পুলিশ ফাঁড়ির সামনের রাস্তাও ডুবে গেছে।

উপশহরের সি-ব্লকের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লবিবুর রহমান বলেন, ‘টানা বৃষ্টি হলেই উপশহর এলাকায় পানি জমে যায়। তিন দিন ধরে বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট-ঘরবাড়ি ডুবে আছে।’

উপশহরের ডি ব্লকের কালভার্ট পার হয়ে নতুন মসজিদের কাছেই একটি কলোনিতে প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস করে। সেখানকার বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। অনেকের খাট-পালঙ্ক ডুবে গেছে।

কলোনির বাসিন্দা দিনমজুর সোহেল মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার রাতে ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ ঠান্ডা লাগায় উঠে দেখি বিছানা পর্যন্ত পানি উঠে এসেছে। এর পর থেকে পানিবন্দি হয়ে আছি আমরা। আজ কিছুটা পানি কমেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে তা এক ইঞ্চির বেশি হবে না।’

এ ছাড়া কাজিরবাজার, শেখঘাট, কাজলশাহ, তালতলা, কালিঘাট, মেন্দিবাগ, উপশহর, কদমতলী, কুশিঘাট, ছড়ারপার, তেরোরতন, চালিবন্দর, সাদারপাড়া, সাদাটিকর, নয়াগাঁও, মাছমপুরের নিচু এলাকাগুলোর মানুষও পানিবন্দি হয়ে আছে। দক্ষিণ সুরমার ঝালোপাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সুরমা নদীর তীরবর্তী অনেক স্থানেই বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বর্ষাকালে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি। এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের একটি রেসকিউ টিম সেখানে আছে। কোথাও দখল বা ড্রেন আটকে রাখার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে কি না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত