১৮ জুলাই, ২০১৯ ২০:০৭
সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরকি সমাজের নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঐতিহ্য ধংসের কাজ অভিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আহুত উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
নাগরিক সমাজের আপত্তি-বিক্ষোভ উপক্ষো করে সিলেদের দেড়শ’ বছরের প্রাচীন স্থাপনা আবু সিনা ছাত্রাবাস ভাঙার কাজ শুরুর প্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন ঐক্যবদ্ধ নাগরকি সমাজের নেতারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৬৯ বছরের প্রাচীন স্থাপনা আবু সিরা ছাত্রাবাস সিলেটের ঐতিহ্যের একটি অংশ। এটি সারাদেরে জন্যই একটি সম্পদ। দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধারণকারী এই স্থাপনার ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরসীম। এছাড়া স্থাপতৈরীতির কারণে এটি কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয় এতদঅঞ্চলে বিরলও বটে।
ইতিহিস ঐতিহ্যের প্রতি দায় থেকে যৌক্তিক কারণেই আমরা এই স্থাপনা রক্ষার দাবি জানিয়েছিলাম। গত পাঁচ মাস ধরে এই দাবিতে মিছিল-মিটিং আলোচনা সভা করেছি। এখানকার সাংসদ, সাবেক সাংসদদের সাথে দেখাও করেছি। আমরা এই যানজটপূর্ণ স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ না করে অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে হাসপাতালের স্থাপনের দাবি জানিয়েছিলাম। বিকল্প জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছি।
কিন্তু অত্যন্ত জনমত, যুক্তি, ঐতিহ্যের প্রতি সাংবাধানিক দায়- সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই ভবনটি ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়েছে।
বক্তারা বলেন, আমরা সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব ব্যক্তিবর্গ মিলে এটি রক্ষার দাবিতে মাঠে নেমেছিলাম। কিন্তু আমাদের সাথে আলোচনা করার নূন্যতম সৌজন্যতা না দেখিয়েই এই ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
কেবল বাণিজ্যিক লাভালাভের কথা চিন্তা করেই দ্রুততার সাথে আবু সিনা ছাত্রাবাস ভে্েগ ফেলা হচ্ছে দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, শুনেছি এই ভবন ভাঙায় কোটি টাকার ভাগভাটোয়ারা হচ্ছে। অনেকের পকেটেই যাচ্ছে সেই টাকার অংশ। বাণিজ্যেক স্বার্থ না থাকলে কেনো এমন একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে?
ভবন ভেঙ্গে ফেলা হলেও আন্দোলন চলবে জানিয়ে সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরকি সমাজের নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিহাস, ঐহিত্য, শিল্প সর্বোপরি এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি আমাদের দায় রয়েছে। সেই দায় থেকে ভবনটি ভাঙ্গা হলেও আমরা অন্যায়, এই স্বেচ্ছাচারিতার কথা জনগরে সামনে তুলে ধরবো। এই ভবন ভাঙ্গার মাধ্যমে কি ক্ষতি করা হলো তা জনগনের সামনে তুলে ধরবো।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এখনও সময় আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঐতিহ্য ধংসের কাজ বন্ধ করুন। নতুবা ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।
প্রবীন রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আরশ আলীর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরকি সমাজের সদস্য সচিব এড. জাকির আহমদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রবীন রাজনীতিবিদ ধীরেন সিংহ ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন।
এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্কাস পার্টির সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সিকন্দর আলী, আব্দুল মতিন যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী, বাসদ’র জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেটের সমন্বয়ক উজ্জ্বল রায়, সিপিবি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন, নাট্য সংগঠক শামসুল বাসিত শেরো, পরিবেশকর্মী আব্দুল হাই আল হাদী প্রমুখ।
আপনার মন্তব্য