শাকিলা ববি

২২ আগস্ট, ২০১৯ ০০:২৩

নগরজুড়ে অটোরিকশার অর্ধশতাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড

চারটি সড়কের সংযোগস্থল সিলেট নগরের আম্বরখানা পয়েন্ট। এই পয়েন্টের চারটি মোড়ে গড়ে উঠেছে অটোরিকশার চারটি স্ট্যান্ড। এর মধ্যে আম্বরখানা পয়েন্টের পূর্ব দিকে টিলাগড়-আম্বরখানা সড়কে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। পশ্চিম দিকে টুকেরবাজার-আম্বরখানা-বাদাঘাট সড়কে অটোরিকশা স্ট্যান্ড, উত্তর দিকে আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে স্ট্যান্ড ও দক্ষিণ দিকে বন্দরবাজার-আম্বরখানা রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। চারমুখি এই সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য অটোরিকশা।

কেবল এই সড়কই নয়, সিলেটের বেশিরভাগ সড়কেরই এমন দশা। সড়ক দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। নগরীতে অটোরিকশার অর্ধশতাধিক স্ট্যান্ড রয়েছে। যদি এর একটিরও বৈধতা নেই। সবগুলোই গড়ে ওঠেছে অবৈধভাবে। সড়ক দখল করে এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে তীব্র হচ্ছে নগরীর যানজট। আবার স্ট্যান্ডের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে ভাড়া বৃদ্ধিরও অভিযোগ আছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।

এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের রণে এক এলাকার গাড়ি অন্য এলাকার যাত্রী তুললে চালক ও যাত্রীদের হেনস্থা করেন স্ট্যান্ডের দায়িত্বরতরা।

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলো দখল করে সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে।

আম্বরখানা ছাড়াও নগরের কোর্ট পয়েন্ট, ধোপাদীঘিরপাড়, মজুমদারী, ওসমানী হাসপাতালের সামনে, মদিনা মার্কেট, বাগবাড়ি, টিলাগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠেছে। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের সাথে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি, স্থানীয় প্রভাবশালী ও অনেক রাজনৈতিক নেতা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের প্রভাবেই সড়ক দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

নগরের কোনো সড়ক সম্প্রসারণ হলেই ইচ্ছেমতো অস্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়। আর এই যানজট এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী।

আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ী রায়হান আহমদ বলেন, যত্রতত্র স্ট্যান্ড ও অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি আমরা। আম্বরখানা পয়েন্ট এখন সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। মার্কেট, দোকানের সামনে, যেখানে খুশি তারা অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখেন। তাদেরকে কিছু বলা যায় না। তাদের আছে অদৃশ্য শক্তি।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ নগরের কোর্টপয়েন্ট, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোড, ধোপাদীঘিরপাড়ের ব্যবসায়ীদেরও।

নগরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মঞ্জুর রহমান বলেন, আমার বাড়ি হবিগঞ্জ। বৃদ্ধ বাবা মাকে দেখতে মাসে দুই থেকে তিনবার হবিগঞ্জ যাই। সিলেটে এসে বাস থেকে নেমে সিএনজিতে উঠলেই বিপদে পড়তে হয়। ক্বিনব্রিজের দক্ষিণ পাড়ের মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড করেছে কয়েকজন। ওইখান থেকে যেতে হলে তাদের সিএনজিতেই যেতে হয়। অন্য সিএনজিতে উঠলে তারা হেনস্তা করেন।

মঞ্জুর আহমেদ আরও বলেন, স্ট্যান্ড থেকে সিএনজিতে উঠলে তাদের কথা অনুযায়ী ভাড়া দিতে হয়। কম বেশি করা যায় না। চালকরাও আমাদের অপারগতা বুঝে বেশি ভাড়া দাবি করেন। তাই যেসব এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড আছে সেসব এলাকায় অন্য জায়গার সিএনজিতে যাত্রী তুললে তারা হেনস্তা করেন। তাদের প্রয়োজনীয়তা বুঝে তারা জিম্মি করে রেখেছেন নগরবাসীকে।

সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডে এসব অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন বেশ কয়েকজন চালকও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চালক বলেন, এলাকাভিত্তিক প্রভাবশালীদের মাধ্যমে কিছু চালক অবৈধ ভাবে স্ট্যান্ডগুলো চালাচ্ছেন। এতে প্রশাসনের লোকজনও জড়িত আছেন। আমরা চালকরাও এসব স্ট্যান্ডের কাছে জিম্মি। তবে এসব আর বেশি দিন চলবে না। সিটি বাস সার্ভিস চালু হলেই সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড মালিক ও অসাধু চালকদের দৌরাত্ম্যে কমবে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিসিকের অনুমোদিত কোনো বৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড নেই নগরে। যেসব স্ট্যান্ড আছে সবই অবৈধ। তবে জনস্বার্থে নগরের কয়েকটি পয়েন্টে ৫ থেকে ৬টি সিএনজি অটোরিকশা রাখার মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, নগরের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড করার জন্য কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে মেয়র সাহেব জনসাধারণের সুবিধার্থে নগরের কয়েকটি পয়েন্টে ৫ থেকে ৬টি সিএনজি অটোরিকশা রাখার কথা মৌখিকভাবে বলেছিলেন। কিন্তু এই নিয়ম কেউই মানছেন না। সবাই ইচ্ছেমত অটোরিকশা সড়কে রাখছেন। এজন্য সিসিকের পক্ষ থেকে আমরা মাঝে মাঝে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি।

তিনি আরও বলেন, এসব স্ট্যান্ড নিয়ে আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে। এসব স্ট্যান্ডগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। সড়ক ও জনপথের অনেক জায়গা মানুষজন দখল করে ব্যবহার করছে। তাই সিসিকের পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথের সাথে কথা হয়েছে। নগরে তাদের যেসব খালি জায়গা আছে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো সিসিকের আওতায় আনা হবে। তাদের যে পকেট ল্যান্ডগুলো আছে সেগুলো সিসিককে দিলে গুরুত্ব বুঝে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলো সেসব জায়গায় স্থানান্তর করা হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাদের বৈধ আর কাদের অবৈধ স্ট্যান্ড আছে সে ব্যাপারে আমরা জানি না। কারণ আমরা স্ট্যান্ডের অনুমোদন দেই না। সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থাকা না থাকার বিষয়গুলো আমাদের আওতার মধ্যে পড়ে না। কেউ যদি নো পার্কিং এলাকায় পার্কিং করেন বা সড়ক ব্যবহারের আইন না মানেন তাহলে সেসব ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করি। অনেক সময় মামলা দেই। অনেক সময় সড়কের আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত