হামিদুর রহমান,মাধবপুর

২৪ আগস্ট, ২০১৯ ২০:৪১

চা পাতার দরপতনে লোকসানের মুখে মাধবপুরের ৫ বাগান

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় চা পাতার মারাত্মক দরপতনের কারণে ৫টি চা বাগান হুমকির মুখে পড়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষকে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে দেশীয় চা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে। অপরদিকে ভারত থেকে অবৈধপথে ব্যাপক চা দেশে প্রবেশ করায় চা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে মারাত্মক শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চা পাতার দরপতনের কারণে মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের মালিক , ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের অভিমত এ অবস্থা চলতে থাকলে চা শিল্প বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যাবে না। কারণ চা বাগানগুলো ব্যাংক ঋণ ও বাগানের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। চায়ের দরপতনের কারণে লোকসানের মধ্যে পরে বাগানগুলো ভবিষ্যতে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিনিয়ত সীমান্তে চেরাই পথে চা পাতা আসে।  সীমান্ত রক্ষীরা বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে অনেক চা পাতা জব্দ করেছে। চা শ্রমিক, মালিক ও ব্যবস্থাপকদের অভিযোগ সরকার  চা শিল্পের প্রতি তেমন নজর দেয় না। এ কারণে চা বাগানগুলো বড় আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

জানা যায়, মাধবপুরে চা বাগান বন্ধ হয়ে গেলে ৫ টি চা বাগানের প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এছাড়া মালিকদের বিনিয়োগ করা মোটা অংকের টাকা ও ব্যাংক ঋণ অনাদায়ী হয়ে পড়বে।

মাধবপুরে সরকার  ও ব্যক্তি মালিকানাধিন তেলিয়াপাড়া ,সুরমা, জগদীশপুর, বৈকন্ঠপুর ও নয়াপাড়া চা বাগানের পাহাড়ি ভূমিতে ব্রিটিশ আমলে ৫ টি চা বাগান সৃজন কর হয়। ৫ টি চা বাগানে গড়পড়তা ৩০ হাজার শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে বৈকন্ঠপুর চা বাগান তৃতীয় শ্রেণীর রুগ্ন বাগান হিসাবে পরিচিত।

গত ৪ বছর আগে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে বাগানটি বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় ৩ হাজার চা শ্রমিক পরিবার মারাত্মক মানবিক সংকটে পরে। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা করা হয়। নতুন মালিকানা বৈকন্ঠপুর চা বাগানটি আবার চালু হয়েছে।

বৈকন্ঠপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক শাহজাহান মিয়া বলেন, এ বাগানটি এমনিতেই একটি রুগ্ন বাগান। কিন্তু এ বছর চায়ের দর খুব কম হওয়ায় আমরা বাগানটি পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুর্শেদ খানের মালিকানাধীন নয়াপাড়া চা বাগান। এ বাগানটি কারখানার যন্ত্রপাতির জটিলতায় ৩ মাস অব্দই উৎপাদনে ছিল না। তাদের মালিকানাধীন বাগানের উৎপাদিত কাঁচা পাতা অন্য একটি কারখানায় প্রক্রিয়া জাত করা হয়। মাস খানেক আগে নয়াপাড়া চা বাগানের কারখানা চালু হয়েছে।

বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহাম্মেদ জানান, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় চায়ের বাজার ঠিকিয়ে রাখা এখন কষ্টকর। এর মধ্যে ভারত থেকে সীমান্তে চোরাই পথে বিপুল পরিমাণ নিম্ন মানের চা পাতা দেশে ঢুকে পড়ায় দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় চায়ের চাহিদা কমে গেছে।

তিনি বলেন, নিলাম বাজারে চা বাগানের পাইকারি ক্রেতারা এখন চা কিনতে আগ্রহী নয়। এর কারণ হচ্ছে চোরাই চা পাতায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মিঠে গেছে। এখন শ্রমিকদের বেতন, রেশন, চিকিৎসাসহ সব কিছু মিলিয়ে চায়ের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে  গেছে। এক কেজি চা পাতা উৎপাদন করতে নিম্নে খরচ হয় ২০০ টাকা। কিন্তু নিলামে এখন এক কেজি চায়ের দর উঠছে ১৫০ টাকার কিছু উপরে। অবৈধ পথে চা আসায় দেশের চায়ের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সুরমা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মিরন হোসেন জানান, সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার ২৩ টি চা বাগানে ব্যবস্থাপকগন চা বাগানের কর্ম পরিকল্পনা বাজার দরের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয়।

জগদীশপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার রায় জানান, ভারত থেকে চোরাই পথে নি¤œ মানের চা এসে দেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এটি চা শিল্পের জন্য বড় একটি হুমকি ও বিপদজনক।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত