নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:১০

হাসান মার্কেট নিয়ে আরিফের ‘বিশেষ পরিকল্পনা’

সিলেট নগরীর এক আলোচিত বিপনী বিতান হাসান মার্কেট। নগরীর বন্দরবাজারে অবস্থিত একতলা টিনশেডের এই বিপনী বিতানটি ভেঙ্গে ১৯৯৭ সালে বহুতল বিপনী বিতান নির্মানের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন পৌরসভা। এরপর কেটে গেছে ২২ বছর। সিলেট পৌরসভা অনেক আগেই সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়েছে। তবু হাসান মার্কেট আর পুণঃনির্মান হয়নি।

যদিও পুনঃনির্মানের জন্য মার্কেটটির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করা হয়েছে মোটা অংকের টাকা। প্রতিবছরই সিটি করপোরেশনের বাজেটেও হাসান মার্কেট পুণঃনির্মান খাতে বরাদ্ধ রাখা হয়। তবে তা বছর শেষে তা বাজেটের কাগজেই থেকে গেছে কেবল। হাসান মার্কেট আর বহুতল হয়নি। বরং দিন দিন আরো জীর্ন হয়েছে, মলিন হয়েছে।


এবার এই হাসান মার্কেট নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানালেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রোববার দুপুরে সিটি করপোরেশনের বাজেট বক্তৃতায় মেয়র বলেন, হাসান মার্কেট নিয়ে আমাদের একটি বিশেষ পরিকল্পনা আছে।

তবে পরিকল্পনাটি কী তা না জানিয়ে মেয়র বলেন, যথাসময়ে তা সবাইকে অবগত করা হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সালে সিলেট নগরীর প্রধানতম বাণিজ্যিক এলাকা বন্দরবাজারে নির্মিত হয় ‘হাসান মার্কেট’। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি মুছে দিতে স্মৃতিবিজরিত ‘গোবিন্দ পার্ক’কে ভেঙ্গে নিজের নামে মার্কেট তৈরি করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। ১৯৬৫ সাল থেকেই সিলেটের নিম্নবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই মার্কেটটি।

১৯৯৩ সালে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে জরাজীর্ন মার্কেটটিকে ভেঙ্গে পাঁচ তলা বিশিষ্ট একটি নতুন মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সিলেট পৌরসভা। ওই বছরই মার্কেট উন্নয়ন কমিটি ও সিটি কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুড়ান্ত করা হয় বহুতল ভবনের নকশাও। এরপর অজ্ঞাত কারনে থেমে যায় সে পরিকল্পনা।

১৯৯৭ সালে তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ আবার হাসান মার্কেটটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে এ নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক্ও করে পৌর কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে চারতলা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং সুবিধাবিহীন একটি মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে ১৪ দফা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয় তখন।

চুক্তি অনুসারে মার্কেটের প্রায় তিনশ’ ব্যবসায়ী নির্মিতব্য মার্কেটের দোকানকোঠা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য প্রথম কিস্তিতে ৩৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।

মার্কেট নির্মান মনিটরিং করার জন্য তৎকালীন পৌর কমিশনার আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীকে আহবায়ক করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তবে মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, নগরীর জনসংখ্যা ও মার্কেটের ব্যবসায়ী বেড়ে যাওয়ায় মার্কেটটি ১১ তলা নির্মাণ করা প্রয়োজন এবং অবশ্যই আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং সুবিধা রাখতে রাখতে হবে।

কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ী ও তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান এই প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে মত দেন। এই মতদ্বৈততায় আটকে যায় মার্কেট নির্মান কাজ।

সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ফের হাসান মার্কেট পুনঃনির্মানের উদ্যোগ নেন। তার আমলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান বরাদ্ধের কথা বলে নেওয় হয় ২য় কিস্তির টাকা। কামরানের আমলেই সিটি করপোরেশনের সবক’টি বাজেটে ঝুলানো হয় ‘হাসান মার্কেট পুণঃ নির্মানের’ মুলো। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও প্রথম দফায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে হাসান মার্কেটের আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম মেয়াদে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি আরিফ। এবার দ্বিতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেটে এসে এই মার্কেট নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানালেন মেয়র আরিফ।

জানা যায়, হাসান মার্কেটে প্রায় ২শ ৮০টি দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে প্রতি মাসে সিটি করপোরেশন কর আদায় করে প্রায় ৪ লাখ টাকা করে। বছরে এই কর আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত