এস আলম সুমন, কুলাউড়া

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২০:০৮

কিশোরীর সাথে ‘প্রেম’, কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা

একই এলাকার এক কিশোরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো সুলেমান মিয়া (১৪)-এর। সেই সুবাদে প্রেমিকার বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলো সে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কিশোরীর ভাই ও মা-বাবা মিলে সুলেমানকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন। গুরুতর আহত তাকে উদ্ধার করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য। পাঠানো হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মারা যায় কিশোর সুলেমান।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ রোববার ওই কিশোরী ও তার বাবা-মাকে গেপ্তার করেছে।

সুলেমান মিয়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গ্রামের মৃত বাজিত মিয়ার পুত্র।

পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানে জানান, দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে। তবে মূলত প্রেমের কারণে সুলেমানকে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঘরের খুঁটিতে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয় এবং চিকিৎসাধীনবস্থায় পরদিন শনিবার রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ওই কিশোরীর (১৪) সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায় কিশোর সুলেমান। এসময় কিশোরীর ভাই রেদোয়ান মিয়া (২৫) সুলেমানকে বোনের সাথে ঘরে দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হন। সুলেমানকে ধরে তার হাত-পা ঘরের খুঁটির সাথে বেধে রাখেন রেদোয়ান। এসময় রেদোয়ান ও তার মা-বাবা মিলে সুলেমানকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে সুলেমানের বড় ভাই ইমান মিয়ার মোবাইলে ফোন দিয়ে তাকে আটকে রাখার কথা জানান রেদোয়ান।

খবর পেয়ে সুলেমানের মা ও বড় ভাই এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে (সুলেমানকে) উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাসুক মিয়াকে বিষয়টি জানানো হয়। মাসুক মিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারকে সাথে নিয়ে এসে ঘরের খুঁটিতে হাত পা বাধা ও গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন।

উদ্ধারের পর সুলেমানকে নিয়ে প্রথমে  মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা সুলেমানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ওসমানীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ৯টার দিকে সুলেমানের মৃত্যু হয়। রোববার সিলেট ওসমানী মেডিকেল মর্গে সুলেমানের লাশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুলাউড়া থানা পুলিশ সুলেমানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

এদিকে রোববার ৮ সেপ্টেম্বর সুলেমানের ভাই ইমান বাদি হয়ে প্রধান অভিযুক্ত রেদোওয়ান মিয়া (২৫), তাঁর কিশোরী বোন এবং তাদের মা বাবাসহ ৫জনকে অভিযুক্ত করে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রোববার ওই কিশোরী ও তার মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করলেও মূল অভিযুক্ত রেদওয়ানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এ ব্যপারে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ আতিক মোবাইলে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একই এলাকার হওয়ায় ওই কিশোরীর বাড়িতে সুলেমানের যাতায়াত ছিলো। সেই সুবাদে সমবয়সী ওই কিশোরীর সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুক্রবার কিশোরীর সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায় সুলেমান। এসময় কিশোরীর ভাই তাদেরকে ঘরের ভিতর একসাথে দেখে সুলেমানকে আটকিয়ে হাত পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করে। পরে ইউপিসদস্য মাসুক মিয়া ওই বাড়িতে গিয়ে গুরুতর আহত সুলেমানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন।

তবে কিশোরীর মা-বাবা প্রেম ও আটকে রেখে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে তিনি জানান।

কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী থানায় মামলা দায়ের ও ৩জনকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পূর্ববিরোধের জেরে এর আগে এই দুই পরিবারের মধ্যে সমস্য ছিলো। তবে এবারের ঘটনার কারণ প্রেমঘটিত। শুক্রবার কিশোরীর সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে যায় সুলেমান। এসময় সুলেমানকে ঘরে আটকে রেখে মারধরের কারণে মারাত্মক আহত হয়। শনিবার রাতে সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এজাহারভুক্ত প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত