নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৫:৫১

ইতালি যাওয়ার পথে মারা যান শাহিন, দাফনের পর জানলো পরিবার

অবৈধভাবে দালালদের মাধ্যমে গ্রীস থেকে ইতালি যাচ্ছিলেন শাহিন আহমদ। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। গত ২৩ আগস্ট এ দুর্ঘটনা ঘটে। মেসেডোনিয়ায় শাহিনের দাফনও সম্পন্ন হয়েছে। এর ২৪ দিন পর শাহিনের পরিবার জানতে পারে তার মৃত্যুর খবর।

শাহিন সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের পাগইল গ্রামের বাসিন্দা।

গত সোমবার মেসেডোনিয়া থেকে শাহিনের পরিবারকে এই মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন একই গ্রামের জহির উদ্দিন। জহিরও ওই দুর্ঘটনায় আহত হন বলে জানা গেছে। জহিরের ভাষ্য মতে, তিনি এখনো মেসেডোনিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবিতে সিলেটের ২০ তরুণ নিহতের ঘটনা ঘটেছিল। এবার সে তালিকায় যুক্ত হলেন সিলেট সদর উপজেলার শাহিন। ওই ২০ তরুণও দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

শাহিনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে ইতালি যাওয়ার জন্য দেশ থেকে দালালের মাধ্যমে ইরাক যান শাহিন আহমদ। সেখান থেকে আরেক দালালের মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে পরে গ্রিসে যান। গ্রিস থেকে গত ২৩ আগস্ট মেসেডোনিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া হয়ে সড়ক পথে ইতালি যাচ্ছিলেন শাহিন। জানা গেছে, ২৩ আগস্ট রাতে গ্রিস থেকে দালাল চক্র প্রায় ১৫ জনকে একটি কাভার্ড ভ্যানে করে ইতালি নিচ্ছিল। ওই ১৫ জনের মধ্যে ছিলেন সিলেটের শাহিন এবং জহির উদ্দিনও।

জহিরের বরাত দিয়ে শাহিনের স্বজনেরা জানায়, মেসেডোনিয়ার দেবার নামের এলাকায় পৌঁছালে ওই কাভার্ড ভ্যানকে পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে কাভার্ড ভ্যানে আগুন ধরে যায়। ফলে ভ্যানের ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা আহত হন। মেসেডোনিয়ার পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে। গুরুতর আহতদের মধ্যে শাহিনসহ আরও একজনকে স্কোপজে নামের শহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠায়। তবে অবস্থা গুরুতর না হওয়ায় জহিরসহ অন্যদের দেবারে রাখা হয়।

জহিরের ভাষ্য মতে, তিনি মোটামুটি সুস্থ হলে সেখানকার কর্তব্যরত ব্যক্তিদের কাছে শাহিনের খবর জানতে চান। তখন মেসেডোনিয়ার পুলিশ জানায়, স্কোপজে হাসপাতালে নেওয়ার পর শাহিনের মৃত্যু হয়েছে। পরে স্কোপজে হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও মৃত্যুর বিষয়টি জহিরকে নিশ্চিত করেছেন বলে তিনি শাহিনের পরিবারকে জানিয়েছেন। জহির জানিয়েছেন, শাহিনকে মুসলিম রীতিতে মেসিডোনিয়ায় সমাহীত করেছে সেখানকার একটি সংস্থা। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ওই সংস্থার মাধ্যমে দাফনের ব্যবস্থা করেছিল।

নিহত শাহিনের চাচা মোশায়িদ আহমদ বলেন, ‘আমরা গত সোমবার রাতে জানতে পেরেছি শাহিন মারা গেছেন। এর আগে তাঁর সঙ্গে কোনো ভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গত ২৩ আগস্ট বলেছিল দালালদের মাধ্যমে গ্রিস থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।’

মোশায়িদ আহমদ বলেন, ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শাহিনের বাবা মখলিছুর রহমান ও মা সন্তরা বেগম শোকে কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। আর কেউ যাতে অবৈধ পথে বিদেশে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন মোশায়িদ আহমদ। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শাহিন বড়। তাঁর ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী বলে জানা গেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত