নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:০৮

সিলেটে বিএনপির সমাবেশের আগে হঠাৎ ধড়পাকড়

দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সিলেটে বিভাগীয় মহাসমাবেশ করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দীর্ঘদিন পর এই সমাবেশের মাধ্যমে সিলেটে বড় ধরণের শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। তবে সমাবেশের দু'দিন আগে থেকে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে ধরপাকড়।

রোববার সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এরমধ্যে জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। এদের বেশিরভাগকেই মঙ্গলবারের মহাসমাবেশের লিফলেট বিতরণকালে আটক করে পুলিশ।

গত ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই সিলেটে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বড় ধরণের অভিযান চাললেও নির্বাচনের পর এমন অভিযানও কমে আসে। তবে মঙ্গলবারের সমাবেশের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ফের অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে পুনরায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক ফিরে এসেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মঙ্গলবারের সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই দলটির নেতাকর্মীদের অযথা গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে পুলিশ। মঙ্গলবারের পূর্ব পর্যন্ত এমন গ্রেপ্তার অভিযান আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। তবে পুলিশ দিয়ে অভিযান চালিয়ে সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতারা।

তবে পুলিশের দাবি, কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচীকে বাধাগ্রস্ত করতে নয়, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা বিভিন্ন মামলার আসামী বলেও জানায় পুলিশ।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে সামনে রেখে বিভিন্ন উপজেলায় গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। গণগ্রেপ্তারের নামে হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি।

আগামী মঙ্গলবার বিকেল সিলেট নগরীর রেজিস্টারি মাঠে বিভাগীয় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। দুর্নীতির মামলায় কারান্তরীন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। এছাড়া দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্ট্যাডিং কমিটির আরও কয়েকজন সদস্য এতে অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।

এই মহাসমাবেশকে সফল করতে গত কয়েকদিন দলেই বিভাগজুড়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে বিএনপি। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মীসভা করা, লিফলেট বিতরণসহ নানা প্রচারণার মাধ্যমে এই সমাবেশে বড় ধরণের শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

তবে এখনও মহাসমাবেশ আয়োজনের ব্যাপারে পুলিশ এখনও অনুমতি দেয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

২৪ তারিখের মহাসমাবেশ উপলক্ষে রোববার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, আমরা সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখনও কোনো সাড়া পাইনি। এমনকি মহানগর পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করার সুযোগ চেয়েও পাইনি।

তিনি বলেন, সমাবেশ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। পুলিশের সহযোগিতা না পেলেও সমাবেশ করবো এবং তা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলনের পর রোববার বিকেলে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে বিএনপির লিফলেট বিতরণ থেকে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নোমান উদ্দিন মুরাদ ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলসহ ৬ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যায় জকিগঞ্জে বিএনপি ও ছাত্রদলের ৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ। আর রাতে ফেঞ্চুগঞ্জে ছাত্রদল ও যুবদলের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ফেঞ্চুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান- গ্রেপ্তারকৃতরা বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার আসামী।

তবে সমাবেশকে ঘিরে হয়রানি ও ধরপাকড়ের অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত