কুলাউড়া প্রতিনিধি

০৩ অক্টোবর, ২০১৯ ২৩:১৭

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা, দাবি ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদকের

আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে উদ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে ও আমার পিতাসহ পরিবারের লোকজনের নাম জড়িয়ে অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করে একটি কুচক্রিমহল অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে- এমন অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাঈদ খান শাওন।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে কুলাউড়া পৌরসভার হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শাওন এই অভিযোগ করেন ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে শাওন বলেন, কুলাউড়ায় মাধ্যমিক ও কলেজে পড়াশুনা করার সময় থেকে আমি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলাম। এরপর উচ্চ শিক্ষার্থে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানে আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করে বর্তমানে এম ফিল করার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়াধিন আছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদের দায়িত্ব পাই। সম্প্রতি আমার প্রতিবেশি এক বড় ভাই রউফ আহমদ শিবলু সংবাদ সম্মেলন করে আমার পিতার বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ তুলেন। পাশাপাশি টাকা না চাওয়ার জন্য আমি নাকি তাঁকে হুমকি ধামকি দিচ্ছি এমন বানোয়াট অভিযোগও আমার বিরুদ্ধে তুলেন। আর সেই মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়িয়ে কয়েকটি অনলাইনে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। অথচ ওই সংবাদ পরিবেশনে আমার এবং আমার পিতার কোন বক্তব্য নেয়া হয়নি। শিবলু ভাই অর্থলেনদেনের ক্ষেত্রে যেসব দলিল প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছেন সেটি আমার পিতা মুহিম খানের সাথে ইটের ভাটায় ব্যবসা সংক্রান্ত চুক্তিনামাকে জালিয়াতি করে আরেকটি নকল চুক্তিনামা করেন। আমার পিতার সরলতার সুযোগ নিয়ে শিবলু ভাই কিছু মহলের সহায়তায় বিভিন্নভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আমি কখনো নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাউকে কোন সময় হুমকিতো দূরের কথা কোন অবৈধ কাজ করিনি। আমার পিতাও আওয়মী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমিও ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। আমার ও আমার পরিবারের সামাজিক এবং রাজনৈতিক একটি অবস্থান রয়েছে। আমাদের মর্যাদায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দ্যেশে ওই মহল উঠে পড়ে লেগেছে।

শাওন বলেন, শিবলু ভাই বলেছেন গত রোজার ঈদের পরদিন ৬ জুন আমি ও আমার ভাই উনাকে হুমকি প্রদান করেছি। আমি যদি হুমকি প্রদান করতাম তাহলে তিনি কেন আমার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেননি। এতদিনপর এসে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সবাইকে জানালেন আমি নাকি উনাকে হুমকি দিয়েছি। অথচ ওইদিন আমি সারাদিন ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত ক্রিকফেস্ট নামে ক্রিকেট লীগের খেলায় ব্যাস্ত ছিলাম এবং একইদিন বিকেলে স্থানীয় পালটিলা নামক পিকনিকস্পটে বন্ধুদের সাথে ছিলাম। যার প্রমাণ ও ছবি আমার কাছে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শাওনের পিতা মুহিম খান বলেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগে স্থানীয় নিজামউদ্দিনের সাথে পার্টনারশীপে ইটভাটার ব্যবসা শুরু করি। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ আমার এলাকার সম্পর্কে ভাতিজা রউফ আহমদ শিবলুকে আমার কো-পার্টনার হিসেবে রেখে তাঁর সাথে চুক্তি করি। ওই সময় শিবলু দুই কিস্তিতে আমাকে সর্বমোট ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা প্রদান করে। কিন্তু ২০১৭ সালে আমাদের ইট ব্যবসায় আর্থিক লোকসান হয়। তখন আমি আমার পার্টনারশীপের টাকা আদায়ের জন্য নিজামকে চাপ দেই। সে টাকা না দেওয়ায় তৎকালীন বড়লেখা সদর ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়রম্যান সুয়েব আহমদের সহযোগিতায় ও সমঝোতায় লোকসানের টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা আদায় করি। এসময় শিবলুও তার বোনের বিয়ে উপলক্ষে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিলে আমি তাঁকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা প্রদান করি। কিন্তু শিবলু আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার সাথে করা চুক্তিনামা ও আমার স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে আরেকটি নকল চুক্তিনামা তৈরী করে এবং কতিপয় ব্যাক্তিকে নিয়ে আমার কাছে কোনসময় বিশ লাখও কোন সময় ১৭ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে ও আমার ছেলে শাওনসহ পরিবারের সবার সম্মানহানির হুমকি দেয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আমার ছেলে শাওনকে জড়িয়ে মিথা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে একটি অনলাইনে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। কিন্তু সেই সংবাদে আমাদের কোন বক্তব্য নেওয়া হয়নি। এতেই স্পষ্ট একটি মহল আমাদেরকে হেয় করার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। চুক্তিনামা জালিয়াতি ও সম্মানহানির জন্য আমি এবং আমার পরিবার আইনের আশ্রয় নেবো।

এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার রউফ আহমদ শিবলু সংবাদ সম্মেলন করে চুক্তিনামা ও আপোষনামা উপস্থাপন করে সাংবাদিকদের বলেন, মুহিম খান ইটভাটার পার্টনারশীপের কথা বলে ২০ লক্ষাধিক টাকা নেন। পরবর্তীতে কিছুটাকা তিনি প্রদান করলেও বাকি টাকা দিতে গড়িমসি করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মুহিম খান নির্দিষ্ট তারিখে আমার বাকি টাকা পরিশোধ করবেন বলে একটি আপোসনামা করেন। নির্দিষ্ট তারিখে তিনি টাকা না দেওয়ায় আমি এলাকার লোকজনকে নিয়ে বারবার তাঁর কাছে যাই। এর জেরে গত রোজার ঈদের পরদিন ৬ জুন মুহিম খান ও উনার বড় ছেলে শাওন এবং ছোট ছেলে নয়ন স্থানীয় মনসুর ঈদাগাহর সামনের রাস্তায় আমার মোটরসাইকেল থামিয়ে মামলা ও হামলার হুমকি দেন।

হুমকি প্রদানের পর আইনের আশ্রয় নিয়েছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিবলু বলেন, আমি ভয়ে থানায় কোন অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরী করিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত