মুজাহিদুল ইসলাম সর্দার, দিরাই

০৬ অক্টোবর, ২০১৯ ২১:০১

উত্তাল হাওরে বৃক্ষরোপণ ও নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণের দাবি

হাওর বেষ্টিত জনপদ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা। নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলার মোট আয়তনের ৭০ ভাগই বছরের ৬ মাস থাকে পানির নিচে। উপজেলাটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে কালিয়া গুটা, চাপতি, বরাম, নলোয়াসহ ছোট-বড় হাওর। হাওড়ের উত্তাল তরঙ্গ আর বজ্রপাতে প্রতি বছরই প্রাণ হারান এই এলাকার বিপুল পরিমাণ মানুষ। তাই এলাকাবাসীর দাবি হাওরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে হাওরে হিজল করচ সহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ ও হাওরের মধ্যবর্তী স্থান গুলোতে নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ করার।     

হাওরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতি বছর বর্ষাকাল বা স্বাভাবিক বন্যায় হাওর প্লাবিত হয়। বছরের কয়েক মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ভরা বর্ষায় হাওর গুলো ভয়ংকর রূপ নেয়। দিরাই উপজেলা সদরের সাথে একটি ইউনিয়নেরও সংযোগ সড়ক না থাকায় চলাচলের একমাত্র অবলম্বন বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাউ। তাই জীবন জীবিকার তাগিদে বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় হাওর পাড়ের ৩ লক্ষাধিক মানুষের। হাওরের বিশাল গভীর জলরাশির উত্তাল তরঙ্গের মধ্যদিয়েই বর্ষাকালে হাওরের একস্থান থেকে আরেকস্থানে যাতায়াতের জন্য পাড়ি জমালে কিংবা নৌকা ভাসালে মনে হয়, অকুল দরিয়ার কূল নাই কিনারা নাই। আর এর মধ্যে বৈরী আবহাওয়া হলেই ভয়ংকর রূপ নেয় হাওর।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার কালিয়াগুটা হাওরের নৌকাডুবির ঘটনায় শিশু নারীসহ ১০ জনের প্রাণহানি হয়। ছোট শিশুদের মৃত্যুতে উপজেলার গণ্ডি পেড়িয়ে সিলেট বিভাগে শোকের ছায়া নেমে আসে। এরপর থেকেই এলাকাবাসী হাওড়ের নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।  

পৌর কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ বলেন, প্রতিবছরই হাওরে ঝড়ের কবলে দুর্ঘটনায় নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন হাওরবাসী। দুর্ঘটনায় শিকার হাওরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এখন হাওরে হিজল করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ ও নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণের দাবি তুলেছেন হাওর পাড়ের মানুষ। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।

দিরাই উপজেলা ব্র্যাকের সমন্বয়কারী পারুল আক্তার বলেন, হাওরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে মানবিক সহায়তা প্রকল্পের আওতাধীন দিরাই উপজেলার হাওর গুলোতে বজ্র নিরোধক ও নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্ভবত আগামী বছর কাজ শুরু হতে পারে।

কালিয়াগুটা হাওরের সীমান্তবর্তী চরনারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রতন কুমার দাস তালুকদার বলেন, প্রতিবছরই ঝড়ের কবলে পড়ে হাওরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এলাকাবাসীর দাবি হাওর পাড়ের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে হাওরের মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ ও হিজল করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা। বৃক্ষ যেমন দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের আশ্রয়স্থল তেমনি হাওরের মাঝখানে চিরহরিৎ বর্ণের হিজলের সারি সারি বৃক্ষ ভ্রমণপিয়াসি যেকোনো পর্যটকের নজর কাঁড়বে।   

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ-২ দিরাই শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, হাওরে নিরাপত্তা টাওয়ার ও বৃক্ষরোপণের হাওরবাসীর দাবী খুবই যুগোপযোগী। হাওর পাড়ের মানুষের চলাচলের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপত্তা টাওয়ার ও বৃক্ষরোপণ খুবই প্রয়োজন। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে টাওয়ার ও বৃক্ষরোপণের আপ্রাণ চেষ্টা করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত