নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:৪৪

মেয়রের বিরুদ্ধে জিডি: কী ঘটেছিলো সেদিন?

গত বছর অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন তারা দু'জন। সে নির্বাচনে ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের পান ৩১৪ ভোট। সেই নির্বাচনের প্রায় এক বছর পর আবার মুখোমুখি আরিফ ও তাহের।

এবার আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনেছেন যুব সংগঠক এহসানুল হক তাহের। এই অভিযোগে বুধবার থানায় সাধারণ ডায়রিও (জিডি) করেছেন তিনি। জিডিতে নিজের জীবনের নিরাপত্তা হুমকিতে বলে উল্লেখ করেছেন তাহের।

যদিও হুমকি প্রদানের অভিযােগ অস্বীকার করেছেন মেয়র আরিফুল হক।

আসলে তাহেরের সাথে কী ঘটেছিলো আরিফুল হকের? গত মঙ্গলবারের সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে আলাপ করে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে সেদিন কী ঘটেছিলো।

জানা যায়, নগরীর জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক সম্প্রসারণের কাজ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সম্প্রসারণের কারণে ভাঙ্গা পড়ছে এই সড়কের অনেক স্থাপনা। এই নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর শরনাপন্ন হন জিন্দাবাজার পয়েন্টের কয়েকজন ব্যবসায়ী।

জানা যায়, সিটি করপোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল আহমদ ফোন করে মেয়র আরিফকে জিন্দাবাজার নিয়ে আসেন। জিন্দাবাজার পয়েন্টে জামাল আহমদেরও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসময় তিনিসহ এই এলাকার আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী সড়ক সম্প্রসারণের সময় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না ভাঙ্গার জন্য মেয়রের কাছে অনুরোধ জানান। এই নিয়ে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মেয়র আরিফ ও এহসানুল হক তাহেরের কথাকাটাকাটি লেগে যায়।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর জামাল আহমদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এইটা আসলে তেমন কোনো ঘটনা না। সড়ক সম্প্রসারণে আমরা ব্যবসায়ীরা যাতে কম ক্ষতিগ্রস্ত হই এজন্য মেয়র সাহেবকে অনুরোধ করেছিলাম। তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

জামাল আহমদ বলেন, ''এই সময় কথাপ্রসঙ্গে মেয়র সাহেব বলেন, 'মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী তো সড়ক ৮০ ফুট করার কথা। আমি তো তা করছি না। আমি তো আপনাদের অনেকটা বাঁচিয়ে দিচ্ছি।' তখন তাহের বলেন, 'মাস্টার প্ল্যান আমাকে দেখান'। এর জবাবে মেয়র বলেন, 'অফিসে আসলে মাস্টারপ্ল্যান দেখতে পারবেন'। এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে কিছুটা কথাকাটাকাটি হয়। এরপর আমি মেয়র সাহেবকে সরিয়ে নিয়ে আসি। ঘটনা এই পর্যন্তই। হুমকির কোনো ঘটনা ঘটেনি।''  

এই ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সাথেও কথা হয়েছে সিলেটটুডে'র। তারাও প্রায় একই ধরণের তথ্য দিয়েছেন। জিন্দাবাজার এলাকার ওয়েল ফুডের কর্মচারী ইমরান আহমদ বলেন, দু'জনের মধ্যে কিছুটা কথাকাটাটি হয়েছে। তবে গালাগালি বা হুমকি প্রদানের মতো কিছু শুনিনি।

ওই এলাকার কাপড়ের দোকানের কর্মচারী রুবেল আহমদ বলেন, প্রথমে তাহের সাহেবই উচ্চস্বরে কথা বলেন। তবে হুমকি দেওয়ার মতো কিছু শুনিনি।

একই ধরণের বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় কসমেটিক্স ব্যবসায়ী মো: মানিকও।

তবে বুধবার সিলেট কতোয়ালি থানায় দায়ের করা জিডিতে এহসানুল হক তাহের উল্লেখ করেন, ''মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) আনুমানিক বিকাল ৫টায় জিন্দাবাজারে লতিফ সেন্টারের সম্মুখের ডান পার্শ্বে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে ড্রেন খননের লক্ষ্যে জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে আলাপকালে পরিকল্পনা প্রণয়নের কপি চাওয়ায় তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হন। ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখী অবস্থায় হুমকি প্রদান করে তিনি বলেন, 'দোকান ভাঙ্গবো পারলে আটকাও'। এমতাবস্থায় আমি এবং আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি আমার মৌরশী সত্ত্বের দোকান রক্ষা ও আমার নিজের নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’'

বুধবার বিকেলে সিলেটটুডে'র সাথে আলাপকালেও তাকে হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেছেন এহসানুল হক তাহের। হুমকি প্রদানের ভিডিও আছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার রাতে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি কাউকে হুমকি প্রদান করিনি। আমার সাথেই বরং তাহের উচ্চবাচ্য করেছেন। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য তার দোকান ভাঙতে দেবেন না বলেও জানান তাহের।

এখন আমার বিরুদ্ধেই তিনি থানায় জিডি করেছেন। এটি উন্নয়নবিরোধী কোনাে ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে বলে শঙ্কা আরিফের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত