নিজস্ব প্রতিকেদক

১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:৫৭

সিলেটে রবীন্দ্র স্মরণোৎসব: আরিফে আপত্তি আওয়ামী লীগের

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিলেট ভ্রমণের একশ' বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্যাপক আয়োজনে রবীন্দ্র স্মরণোৎসব পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন আয়োজকরা। ইতোমধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আহ্বায়ক ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয়েছে ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষ স্মরণোৎসব’ কমিটি। এই কমিটি তাদের কার্যক্রমও শুরু করে দিয়েছে।

তবে মাঝপথে এসে এই কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতারা আবুল মাল মুহিতের কাছে কমিটি নিয়ে নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানান। কমিটি সর্বজনীন হয়নি বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের। বিশেষত কমিটির সদস্য সচিব বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যাপারে জোরালো আপত্তি তুলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাকে এই পদ থেকে সরানোর দাবিও ওঠে। এমন দাবির প্রেক্ষিতে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য দু'দিনের সময় নিয়েছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ স্মরণোৎসবের আয়োজন ও এতে প্রধানমন্ত্রীর আগমন নিয়ে আলাপ করতে বৃহস্পতিবার রাতে নিজের বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে সিলেটের আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানান আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বৈঠকে ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষ স্মরণোৎসব’ কমিটির সদস্য সচিব, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগ নেতারা বিশাল এ আয়োজনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করেন। এতো বড় আয়োজনের ব্যাপারে তাদের অবহিত করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশকে উপেক্ষা করে স্মরণোৎসবের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

এই আয়োজনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না দাবি করে বৈঠকে কামরান বলেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এতো বড় আয়োজন হবে। এখানে প্রধানমন্ত্রী আসবেন- অথচ আমরা তা জানি না। আনুষ্ঠানিকভাবে আজকেই প্রথম জানলাম।

স্মরণোৎসবের কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথকে যারা ধারণ করেন, চর্চা করেন, যারা রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির কবি মনে করেন তাদের নিয়েই এই কমিটি গঠন করা উচিত।

কমিটির সদস্য সচিবের ব্যাপারে আপত্তি তুলে তিনি আবুল মাল আবদুল মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি একজন প্রাজ্ঞ লোক। আপনি যে কমিটির আহ্বায়ক সেই কমিটিতে আপনার সঙ্গে মানানসই এমন কাউকে সদস্য সচিব করা উচিত।

কামরানের পর প্রায় একই ধরণের বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজাত আলী রফিক, বিজিত চৌধুরী, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির সহ কয়েকজন।

এরা সকলেই এই আয়োজনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানান।

এ পর্যায়ে কমিটির সদস্য সচিব আরিফুল হক চৌধুরী বক্তব্য দিতে এসে নতুন সদস্য সচিব হিসেবে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, কামরান ভাই সদস্য সচিব হলে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

তবে এমন প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে কামরান বলেন, এবিষয়ে আপনি আমি দু'জনই সমান। রবীন্দ্রনাথের এতোবড় আয়োজনের সদস্য সচিব হওয়ার মতো যোগ্য লোক আমরা নই। যোগ্য কাউকেই এ পদে বসানো উচিত।

বৈঠকে প্রবীণ অধ্যাপক বিজিত দে, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার আরশ আলীসহ কয়েকজনের নাম সদস্য সচিব হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরও কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীর নাম প্রস্তাব করা হয়।

সবার বক্তব্য শেষে কমিটি পুনর্গঠনের আশ্বাস দিয়ে দুই দিনের সময় নেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরআগে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ এই আয়োজনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন।

বৈঠকের আলোচনার ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিজিত চৌধুরী বলেন, আমরা এই আয়োজনের ব্যাপারে আমাদের আগে না জানানো এবং কমিটি নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছি। বলেছি- প্রধানমন্ত্রী আসছেন অথচ আমরা জানি না। আর কমিটিতে অনেক সংস্কৃতিকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। কমিটি সার্বজনীন হয়নি। পুরো আয়োজন কুক্ষিগত করে ফেলা হয়েছে।

বিজিত চৌধুরী বলেন, আমাদের বক্তব্য শুনে কমিটির আহ্বায়ক আবুল মাল আবদুল মুহিত কমিটি পুনর্গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ও আরিফুল হক চৌধুরী কল ধরেননি।

প্রসঙ্গত, ১৯১৯ সালে সিলেটে আসেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ বছর তার সিলেট আগমনের শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে ৭ ও ৮ নভেম্বর সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে দু’দিনব্যাপী স্মরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। উৎসবের মূল আয়োজন ছাড়াও ১ নভেম্বর থেকে সিলেটে রবীন্দ্র শতবর্ষ স্মরণ উৎসবের বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত