শাকিলা ববি

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:২৮

নগরীতে হেলমেট ছাড়াও মিলছে পেট্রোল

নগরীতে মোটর সাইকেল চালকদের হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হেলমেট ছাড়া মোটর সাইকেলে পেট্রোল বিক্রি বন্ধের নির্দেশনা দেয় সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক শাখা। ‘হেলমেট আছে তো জ্বালানি আছে’ নামে এই কার্যক্রম শুরু হয় গত ১ অক্টোবর। নগরীর পেট্রোল পাম্পগুলোকে চালকের হেলমেট না থাকলে পেট্রোল বিক্রি না করার আহ্বান জানায় পুলিশ।

এই কার্যক্রম শুরুর পর মোটর সাইকেল চালকের হেলমেট ব্যবহার কিছুটা বাড়লেও অনেকেই তা মানছেন না। পেট্রোল পাম্পগুলোতেও হেলমেটবিহীন মোটর সাইকেল চালকদের কাছেও পেট্রোল বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার নর্থ ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েল স্টেশনে কয়েকজন তরুণ আসেন পেট্রোল নিতে। কারো মাথায় হেলমেট নেই। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হবে না এই ফেস্টুনটি দেখিয়ে পাম্পের একজন কর্মী তাদের হেলমেট ছাড়া পেট্রোল বিক্রি হবে না বলে জানান। এই কথা শুনেই সেই কর্মীর উপর চড়াও হন তিন তরুণ। পরে কোনও উপায় না দেখে তাদের পেট্রোল দিয়ে বিদায় দেন পাম্পের কর্মীরা।

একইদিনে নগরীর সোবহানীঘাট পয়েন্টে মোটর সাইকেল নিয়ে পেট্রোল নিতে আসেন এক তরুণ। তার মাথায়ও হেলমেট নেই। যথারীতি পাম্পের কর্মী হেলমেট ছাড়া পেট্রোল বিক্রিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এসময় এই পাম্পে হেলমেটসহ আরেকবার মোটর সাইকেল চালক আসেন পেট্রোল নিতে। তার কাছ থেক কিছু সময়ের জন্য হেলমেটটি ধার নেন আগের চালক। পেট্রোল কিনে নেয়ার পর ফিরিয়ে দেন হেলমেট।

এরকম চিত্র দেখা গেছে নগরীর আরও কয়েকটি পেট্রোল পাম্প ঘুরে।

ফলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুলিশের এই উদ্যোগের পুরোপুরি সুফল মিলছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকরা নিজে থেকে সচেতন না হলে এমন উদ্যোগ পুরোপুরি কার্যকর সম্ভব হবে না।

সরজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরের প্রায় সবকটি পেট্রোল পাম্পেই হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হয়। কিছু কিছু পাম্পে তেল দেওয়া হলেও মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট পড়ে তেল নেওয়ার আহবান জানান পাম্পের কর্মীরা। কিছু পাম্পে শুধু নামে মাত্র ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ ফেস্টুন ঝুলানো রয়েছে। গ্রাহকরা হেলমেট ছাড়াই তেল নিচ্ছেন।

নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার নর্থ ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েল স্টেশনে পেট্রোল নিতে আসা মোটরসাইকেল আরোহী হুমায়ূন আহমেদ হিমু বলেন, নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি সব সময় বাইক চালানোর সময় হেলমেট পড়ি। কিন্তু বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চালকরা দেখি হেলমেট পড়েন না। এই প্রবণতা তরুণ ও যুবকদের মধ্যে বেশি। হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হবে না এই সিদ্ধান্ত শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমি নিজেই প্রতিদিন দেখি হেলমেট ছাড়াই মোটর সাইকেল চালকরা এসে পেট্রোল নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া হবে না’ এটি বর্তমান সময়ের জন্য উপযোগী সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। হেলমেট ছাড়া তেল দিলে পেট্রোল পাম্প ও মোটরসাইকেল আরোহী দুপক্ষকেই জরিমানা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ এখন ভয় ছাড়া কাজ হয় না। আর জেল জরিমানা করলে মানুষজন সচেতনতার জন্য না হলেও ভয়ে হেলমেট পড়বে।

হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চালকদের হেলমেট ব্যবহারে উদ্যোগী করতে যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল সেটা কাজ করছে না। পাম্পগুলোতে হেলমেট ছাড়াও তেল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কিছু করার নেই। আমরাতো পাম্প মালিকদের জোর করতে পারি না। কারণ এটা ব্যবসা। যারা হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নিতে আসে আমরা তাদের বলি। কিন্তু তারা শুনতে রাজি না।

তিনি বলেন, যারা ক্রেতা তাদেরকেও বুঝতে হবে। পেট্রোল দিব না বললেই মোটরসাইকেল চালকরা অশোভন আচরণ করেন। বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে বিশৃঙ্খলার ভিডিও ফুটেজও আছে।

সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল আরও বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশকেই তৎপর হতে হবে। কারণ হেলমেট ব্যবহার না করলে দণ্ড দেওয়ার আইন আছে। কয়েকটি পেট্রোল পাম্পের আশপাশে পুলিশ অভিযান দিয়ে কয়েকজন চালককে জরিমানা করলেই বাকীরা শিক্ষা গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা নৈতিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে মোটরসাইকেল আরোহীদের সচেতন করতে চাইছি। আমরা জানি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাতারাতি কিছু বদলাবে না। যেহেতু এটা আইনি বাধ্যবাধকতা না তাই আমরাও কাউকে জোর করতে পারি না। তবে আমরা এ ধরনের প্রচার চালিয়ে যাবো। কেউ না কেউ হয়তো আমাদের এই উদ্যোগে সচেতন হবেন।

তিনি বলেন, এক পাম্পে পেট্রোল না দিলে গ্রাহকরা অন্য পাম্প থেকে পেট্রোল নিচ্ছেন। মাঝে মাঝে এসব বিষয় নিয়ে গ্রাহকরা বিশৃঙ্খলাও করছেন। আবার পাম্প মালিকদের আমরা জোর দিতে পারি না। কারণ পেট্রোল বিক্রি করা তাদের ব্যবসা। এসব ব্যাপারে জোর দিলে অনেক পাম্প মালিক মন খারাপ করেন। তাই আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি আমরা আমারে নৈতিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। এটি গ্রহণ করতে একটু সময় লাগবে। তবে সবাই যখন নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করবেন তখন আর ব্যানার, ফেস্টুন লাগবে না। নিজ দায়িত্বেই মোটরসাইকেল আরোহীরা হেলমেট পড়বেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত